পাঁচ বছর পর আবারো চালু ভারত-চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট

পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আজ (রোববার) থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করছে ভারত ও চীন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
চীন-ভারত ফ্লাইট পুনরায় চালু
চীন-ভারত ফ্লাইট পুনরায় চালু |বাসস

পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আজ (রোববার) থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করছে ভারত ও চীন। এই পদক্ষেপকে বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এশিয়ার দুই বড় রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দুই প্রতিবেশী দেশ এখনো কৌশলগত দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে শীতল প্রতিযোগিতাও চলছে। যদিও ২০২০ সালের সীমান্ত সঙ্ঘর্ষের পর থেকে ধীরে ধীরে চীন-ভারত সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারত সরকার জানিয়েছে, সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হওয়ায় দু’দেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়বে এবং ‘দ্বিপাক্ষিক লেনদেন’ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।

বেইজিংয়ের সাথে যখন সম্পর্কোন্নয়ন হচ্ছে, ঠিক তখনই ভারতের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত মস্কোর তেল কিনে রাশিয়ার যুদ্ধকে উৎসাহ দিচ্ছে।

ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক এয়ারলাইন ‘ইন্ডিগো’ কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এটি স্থানীয় সময় রাত ১০টায় গুয়াংঝুর উদ্দেশে রওনা হবে।

ভারত ও হংকংয়ের মধ্যে ইতোমধ্যেই নিয়মিত ফ্লাইট চলছে। নভেম্বর থেকে নয়া দিল্লি, সাংহাই ও গুয়াংঝুর মধ্যেও ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের সভপাতি রাজীব সিং কলকাতায় এএফপি’র সাংবাদিকদের বলেছেন, সরাসরি বিমান চলাচলে পণ্য পরিবহণ ও যাত্রার সময় কমবে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো হবে।

ভারতের পূর্ব উপকূলীয় বন্দর নগরী কলকাতার সঙ্গে চীনের শত বছরের পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। বৃটিশ শাসনের সময় চীনা ব্যবসায়ীরা সেখানে অভিবাসী হিসেবে বসবাস করতেন। সেজন্যই ইন্দো-চাইনিজ ফিউশন খাবার এখনো কলকাতার মানুষের কাছে জনপ্রিয়।

কলকাতার ট্যাংরা এলাকার চায়নাটাউনের সিভিল সোসাইটি নেতা চেন খোই কুই বলেন, ‘চীনে যাদের আমাদের মতো আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের জন্য এটি দারুণ খবর। আকাশপথের এই সংযোগ বাণিজ্য, পর্যটন ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়াবে।

দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ

ভারতের চীনের সাথে বাণিজ্যে বড় ঘাটতি রয়েছে। দেশটি শিল্প ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য চীনের কাঁচামালের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। মূলত গত বছর রাশিয়ায় এবং আগস্টে চীনে উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্কে উত্তরণ ঘটে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে চীন থেকে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি করেছে দেশটি। যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে চীনে ভারতের রফতানির পরিমাণ ছিল ১.৪৭ বিলিয়ন ডলার। এটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও গত বছর একই সময়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।

করোনা মহামারির সময় ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ৫০০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।

২০২০ সালের সীমান্ত সঙ্ঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় এবং চার চীনা সেনাসদস্য নিহত হওয়ার পর দু’দেশের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়। ভারত চীনা বিনিয়োগে বিধিনিষেধ কঠোর করে এবং টিকটকসহ শত শত অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। এরপর ভারত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে। ওই জোটে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে। এটি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।

উভয় পক্ষই তাদের বিতর্কিত ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (২,১৭৫ মাইল) সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। তবে সম্প্রতি হিন্দু ধর্মালম্বীদের উৎসব ‘দিওয়ালি’ তে তারা একে অপরকে মিষ্টি উপহার দেয়। এটিকে ‘সৌহার্দ্য প্রকাশের ইঙ্গিত’ বলে উল্লেখ করেছেন চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং।

দূরদর্শী বিশ্লেষণ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, আগস্টে নরেন্দ্র মোদি ও সি জিন পিংয়ের বৈঠকের পর দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ওয়াশিংটনকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। যদিও সম্পর্ক জোরদারে এখনো অনেক কাজ করতে হবে।

সংবাদপত্রটি আরো জানায়, চীনের ক্রমবর্ধমান দাপুটে অবস্থাকে সামলানো ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্পের আকস্মিক কূটনৈতিক পদক্ষেপের পরও এই বাস্তবতা অপরিবর্তিতই রয়েছে।

সূত্র : এএফপি/বাসস