রোহিঙ্গা সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চিয়তার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফাতেমা খাতুন নামে এক শরনার্থী। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তবে তিনি এও বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। আমার জমি ও সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই। আট বছর হলো এখানে এসেছি। আমাদের আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে।‘
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীর উপর দুই দিনব্যাপী একটি সম্মেলন আয়োজন করছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা আজ সোমবার। এ দিন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন।
শরনার্থী হিসেবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আসার আট বছর পর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। মিয়ানমারের সামরিক অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এটিকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা অ্যাডভোকেসি গ্রুপের ফোর্সফুলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিটির চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, ২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় সম্প্রদায় বা মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের সরাসরি কোনো সংলাপ হয়নি। তিনি বলেন, ’এই সম্মেলনকে সমাধানের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
সম্মেলনে কারা উপস্থিত আছেন?
২৪ আগস্ট রোহিঙ্গা ইস্যুর উচ্চ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। সম্মেলনের লক্ষ্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা। সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও অংশগ্রহণ করেছেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক দূত, জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের বিদেশী মিশনের কর্মকর্তারা সম্মেলনে উপস্থিত আছেন।
খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প পরিদর্শন করবে। সেখানে খাদ্য ও ওষুধ সংকট নিয়ে শরণার্থীদের সাথে কথা বলবে।
কক্সবাজার থেকে রিপোর্ট করা আল জাজিরার টনি চেং বলেছেন, এই বছরে খাদ্য রেশন মাসিক ১২ ডলার থেকে কমিয়ে প্রথমে আট সেখান থেকে এখন ছয় ডলার করা হয়েছে। এর ফলে শরনার্থীরা মাছ কিংবা গোশত খেতে পারছেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের পরিমাণ বাড়ালেও তহবিল কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। টনি চেং বলেন, রোহিঙ্গাদের যেন ভুলে না যায় সেজন্য ড. মোহাম্মদ ইউনূস এই সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলনের তাৎপর্য কী?
আরাকান রোহিঙ্গা জাতীয় কাউন্সিলের সহ-সভাপতি নে সান লুইনের বলেন, ‘আট বছরের মধ্যে প্রথম রোহিঙ্গাদের কথা শোনার সুযোগ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কণ্ঠস্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর জাতিসংঘের উচ্চ-স্তরের সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। ডিসেম্বরে কাতারে সম্ভবত আরেকটি সম্মেলনে হবে। সম্মেলনগুলো অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করি রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে।’
তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতির তীব্র অবনতি ঘটেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ফাতেমা খাতুন সম্মেলনের ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। আমার জমি ও সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই। আট বছর হলো এখানে এসেছি। আমাদের আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে।‘
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে জাতিসংঘ কী বলেছে?
রোববার ও সোমবারের বৈঠকের আগে, জাতিসংঘ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের জন্য নাগরিকত্ব, সমতা ও নিরাপত্তার আহ্বান জানিয়েছে।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, ’২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান সহিংসতার বিচার এখনো পাওয়া যায়নি। আমাদের এখন এই প্রশ্নটি করতে হচ্ছে যে এই দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশা কখন শেষ হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও সমতার অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে।