মিয়ানমার : ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে জান্তার কঠোর অবস্থান ও বিতর্ক

স্বাস্থ্য খাতে জান্তার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। মিয়ানমারের জান্তা-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার থেকে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) ওষুধ বিতরণ সীমিত করেছে। এখন থেকে এই ওষুধ শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে জান্তার কঠোর অবস্থান ও বিতর্ক
ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে জান্তার কঠোর অবস্থান ও বিতর্ক |সংগৃহীত

মিয়ানমারে আসন্ন ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সামরিক জান্তা নির্বাচনী নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার নতুনভাবে পুনর্গঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শান্তি কমিশনের প্রথম বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সময় জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং দলীয় অফিস ও কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা লকডাউন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুন তুন নাউং রাজনৈতিক দলের সুরক্ষা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন।

তবে ইয়াঙ্গুনের মতো জান্তা-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সামরিক সমর্থক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক প্রতিনিধি ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) চেয়ারম্যান খিন ই এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার বলেন, ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে ‘ভয়ের কিছু নেই’।

খিন ই প্রাক্তন জান্তা নেতা থান শোয়ের আমলে পুলিশ প্রধান হিসেবে শাসনবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পথ প্রশস্ত করতে অতি-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির সাথে সমন্বয় করে সামরিক-পন্থী সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন। সম্প্রতি ইয়াঙ্গুনে অতি-জাতীয়তাবাদীদের সাথে বৈঠক করে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি তাদের ‘পুরাতন বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

অন্যদিকে, গত ২৯ জুলাই জান্তা কর্তৃক নির্বাচন সুরক্ষা আইন আরোপের ফলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আইনে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহতকারী কর্মকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই পরিকল্পিত ভোটকে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার একটি প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাপকভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের সভায় মিন অং হ্লাইং নির্বাচন-সম্পর্কিত অপরাধের দ্রুত বিচারের আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা দেন, ডিসেম্বরের নির্বাচন ‘যাই হোক না কেন অনুষ্ঠিত হবে’, এমনকি চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেও আরো শহরে ভোট আয়োজনের জন্য সামরিক অভিযান চালানো হবে। তার বক্তব্যে নির্বাচন আয়োজনকে সংসদ আহ্বান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে উপস্থাপন করা হলেও বিশ্লেষকদের মতে, আসল লক্ষ্য সামরিক নিয়ন্ত্রণকে সুসংহত করা।

এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে জান্তার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। মিয়ানমারের জান্তা-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার থেকে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) ওষুধ বিতরণ সীমিত করেছে। এখন থেকে এই ওষুধ শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

এআরটি ওষুধ মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং গ্লোবাল ফান্ডসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরবরাহ করে। পূর্বে রোগীদের সুবিধার্থে এনজিওগুলিকে ব্যাপকভাবে এই ওষুধ বিতরণের অনুমতি দেয়া হলেও এখন সেই পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ফলে রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তি নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র : ইরাবতি