সাত ছাত্র-অ্যাক্টিভিস্টের বর্ণনায় দিল্লি পুলিশের ‘আয়নাঘর’

তাদের থানায় না নিয়ে ‘গোপন সেলে’ রেখে রাতের বেলা নগ্ন করে, বেল্ট ও লাঠি দিয়ে পায়ের তলায় মারধর করা হয়। একজনের সামনে অপর দু’জনকে নগ্ন করে মারধর করে ভয় দেখানো হয়।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
দিল্লি পুলিশের আয়নাঘর
দিল্লি পুলিশের আয়নাঘর |দ্য ওয়ার

দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ‘আয়নাঘর’ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগী সাত ছাত্র-অ্যাক্টিভিস্ট। সেখানে তারা পুলিশ কর্তৃক বেআইনিভাবে আটক ও নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন।

আটক ভুক্তভোগীরা হলেন গুরকিরত, গৌরব, গৌরাঙ্গ, লক্ষিতা, এহতেমাম, সম্রাট ও রুদ্র। তারা ভগত সিং ছাত্র একতা মঞ্চ (বিএসসিইএম), ফোরাম অ্যাগেইনস্ট কর্পোরেটাইজেশন অ্যান্ড মিলিটারাইজেশন (এফএসিএএম) এবং নাজারিয়া ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত। তাদেরকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়।

ভুক্তভোগীদের দাবি, আইএএস কর্মকর্তা অর্চনা ভার্মা ও তার কন্যা ভালিকা ভার্মার মধ্যকার আদর্শিক দ্বন্দ্বই এই আটকের মূল কারণ।

আটকদের ভাষ্যমতে, ভালিকা হরিয়ানার জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্নাতক এবং নাজারিয়া ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মায়ের সাথে মতবিরোধের জেরে তিনি বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে সরাইয়ে বসবাস শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের প্রশ্নবানে পড়ে যান ভালিকার পরিচিত ও সহকর্মীরা।

গুরকিরত ও লক্ষিতা জানান, পুলিশ বারবার ভালিকার অবস্থান জানতে চায়। অথচ এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পুলিশ এখনো এফআইআরের অনুলিপি দেয়নি। বরং হুমকি দিয়ে বলেছে, দিল্লি এলে গ্রেফতার করা হবে। লক্ষিতার পরিবারকে লিখিতভাবেও জানানো হয়, তাকে দিল্লিতে পাঠালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে।

নির্যাতিত এহতেমাম জানান, তাকে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে টার্গেট করা হয়, ‘মোল্লা’ বলে কটাক্ষ করা হয় এবং ‘লাভ জিহাদ’-এর গল্প বানানোর হুমকি দেয়া হয়। এমনকি দিল্লির ফ্ল্যাটে অস্ত্র রাখার ভয়ও দেখানো হয়। পুলিশ তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, পরিচয়পত্র ও ফ্ল্যাটের চাবিও ফেরত দেয়নি।

সবচেয়ে কনিষ্ঠ রুদ্রকে ১৯ জুলাই নয়াদিল্লি রেলস্টেশন থেকে আটক করা হয়। তার আগে ‘নাজারিয়া’ ম্যাগাজিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আটকদের মুক্তির দাবি জানালেও রুদ্র আটকের পর সব পোস্ট থেমে যায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করে এয়ারপ্লেন মোডে রাখা হয় এবং কোনো আইনি তথ্য বা অভিযোগ জানানো হয়নি।

এক্টিভিস্টরা আরো জানান, তাদের থানায় না নিয়ে গিয়ে ‘গোপন সেলে’ রেখে রাতের বেলা নগ্ন করে, বেল্ট ও লাঠি দিয়ে পায়ের তলায় মারধর করা হয়। একজনের সামনেই অপর দু’জনকে নগ্ন করে মারধর করে ভয় দেখানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, মুসলিম ছাত্র এহতেমামকে তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয় এবং ‘লাভ জিহাদ’ প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করা হয়।

অভিযুক্তদের দাবি, আটকের শেষ দিনে তাদের খালি কাগজ ও মিথ্যা স্বীকারোক্তির নথিতে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়। কোনো এফআইআর অনুলিপি দেয়া হয়নি।

সংগঠনগুলো বলছে, এই ঘটনায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, বেআইনি আটক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রমাণ রয়েছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আটকদের ১৬ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়া হয়। বিএসসিইএম-এর দাবি, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অতীতেও তাদের সদস্যদের জেএনইউতে চিত্র প্রদর্শনের পর ও লোকসভা নির্বাচনের সময় আটক ও নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে।

‘দ্য ওয়্যার’ জানিয়েছে, তারা পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে এবং ই-মেইল পাঠানো হয়েছে।

সূত্র : দ্য ওয়্যার