সাক্ষাৎকারে অং সান সু চির ছেলে

আম্মুর শারীরীক অবস্থা এর থেকে আর খারাপ হতে পারে না

আর মিয়ানমার অবশ্যই স্বাধীন হবে। আমরা মিয়ানমারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখব। এটা সময় নিচ্ছে অনেক বেশি, আর এ পথে অকারণ রক্তপাত হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তা বন্ধ হবে। আমি প্রার্থনা করি, একদিন আমি মিয়ানমারে ফিরব, সবাই মিয়ানমারে ফিরবে, আর আমরা শান্তি পাব।

আয়ুবুর রহমান
অং সান সু চি
অং সান সু চি |ইরাবতি

গত সপ্তাহে আটক গণতন্ত্রী নেতা অং সান সু চির ছেলে কিম অ্যারিস সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, তার মা গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত এবং কার্ডিওলজিস্ট দেখানোর অনুরোধ মেনে নেয়া হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।

মিয়ানমার জান্তা ২০২১ সালে অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তাকে বিচারের মুখোমুখি করে জান্তা সরকার। এখন তিনি উস্কানি, দুর্নীতি ও নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগে ২৭ বছরের সাজা ভোগ করছেন। শাসকগোষ্ঠীর বাইরে কেউ জানে না, তাকে কোথায় রাখা হয়েছে।

ইরাবতিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কিম অ্যারিস এসব বিষয় জানান। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চম্বুকাংশ তুলে ধরা হলো।

Kim-Aris

অং সান সু চির ছেলে কিম অ্যারিস

ইরাবতি : প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল আপনি মায়ের অসুস্থতার কথা প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ কোনো তথ্য পেয়েছেন?

কিম অ্যারিস : না, আমি বলতে পারি না। আমার কাছে কোনো নতুন তথ্য নেই। আমরা যা শুনি, তা যাচাই করা খুব কঠিন। আর আমরা যা জানি, তা-ও খুব সামান্য।

ইরাবতি : আমরা শুধু শুনেছি তিনি বলেছেন, তার হৃদপিণ্ডে ব্যথা বেড়েছে, রক্তচাপ নেমে গেছে, আর তিনি বাইরের কোনো কার্ডিওলজিস্টকে দেখানোর অনুরোধ করেছেন। এটা মঞ্জুর হয়েছে কিনা, জানি না। তবে এটুকু জানি, সঠিক চিকিৎসা পরীক্ষা ছাড়া হৃদরোগ নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব। আর ব্যথাই হৃদপিণ্ড গুরুতর সমস্যার সবচেয়ে বড় লক্ষণ। তার এমআরআই স্ক্যানসহ পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা দরকার, যাতে আসল সমস্যা ধরা পড়ে।

ইরাবতি : জান্তার কাছ থেকে কিছু শোনেননি আপনি?

কিম অ্যারিস : না। তবে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব আসলে গুজব। কিন্তু তাদের মুখপাত্রদের অতীতের মিথ্যা বিবৃতির কারণে তাদের কোনো কথা বিশ্বাস করা কঠিন। মানুষ এখন বুঝে গেছে, সামরিক বাহিনীর কথায় আস্থা রাখা যায় না।

ইরাবতি : অং সান সু চির অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে কি আপনি সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করেছেন?

কিম অ্যারিস : যখনই আমি যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কোনো প্রতিউত্তর পাইনি। তারা হ্যাঁ-না কিছুই বলে না, শুধু নীরব থাকে। গত পাঁচ বছরে আমি মায়ের সাথে যোগাযোগের জন্য বহু অনুরোধ পাঠিয়েছি। কিন্তু দু’বছরেরও বেশি আগে পাওয়া একটি চিঠি ছাড়া আমাকে আর কোনো যোগাযোগের সুযোগ দেয়া হয়নি।

ইরাবতি : আপনার পোস্টের পর সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, আপনার মা সুস্থ আছেন। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন?

কিম অ্যারিস : আমি চাই সেটা সত্যি হোক। কিন্তু আমার কাছে তার সুস্থতার কোনো প্রমাণ নেই।

তারা এমন কিছুই করেনি, যাতে আমি আসতে পারি যে তিনি আসলেই ভালো আছেন। যদি তিনি সুস্থ থাকেন, তবে আমাকে তার সাথে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। অথবা অন্য কোনো সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা তার মৌলিক মানবাধিকার।

আমি জানি, বার্মায় (মিয়ানমার) অসংখ্য মানুষকে তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আমার মা, আমি তার ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। আর আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।

ইরাবতি : অং সান সু চি বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাহলে কিভাবে জানলেন তিনি গুরুতর অসুস্থ?

কিম অ্যারিস : অবশ্যই আমি আমার সূত্র প্রকাশ করতে পারব না। এতে তারা বিপদে পড়বে। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এই খবর আমার কাছে এসেছে।

যখন একাধিক সূত্র একই কথা বলে, তখন আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি। এর আগে অনেকবার গুজব উঠেছে যে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে, এমনকি তিনি মারা গেছেন বলেও শোনা গেছে। কিন্তু তখন আমি বিশ্বাস করিনি। কারণ তথ্যগুলোর মধ্যে মিল ছিল না।

কিন্তু এবার মিল রয়েছে। আর এই প্রথমবার সামরিক বাহিনী আমার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আগে কখনো তারা কিছু বলেনি। তাই আমি মনে করি, এই গুজবের পেছনে হয়তো সত্যিই কিছু আছে।

ইরাবতি : আপনি কি যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো অন্য দেশগুলোকে জান্তার বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করেছেন?

কিম অ্যারিস : আমি সবসময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখনো কোনো ফল পাইনি।

ইরাবতি : তাদের এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তোমার মতামত কী?

কিম অ্যারিস : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময় অনেক কথা বলে, কিন্তু কাজ করে খুব কম। তারা এখন সঠিক কথাগুলো বলছে ঠিকই। কিন্তু তার ফল মিলছে না। আমি চাই আমার মা মুক্ত হোন।

তিনি এখন ৮০ বছর বয়সী। শুধু হৃদরোগই নয়, হাড়ের সমস্যাও রয়েছে তার।

খেতে কষ্ট হয় দাঁতের সমস্যার কারণে। আর তাকে মিয়ানমারের কোনো ভয়ঙ্কর জায়গায় রাখা হয়েছে হয়তো। কেউ জানে না কোথায়। আমরা যা জানতে পারি, তাতে মনে হচ্ছে তাকে একাকী বন্দী করে রাখা হয়েছে। একাকী বন্দিত্বও এক ধরনের নির্যাতন।

আর (জান্তা নেতা) মিন অং হ্লাইং একজন ৮০ বছর বয়সী মহিলাকে নির্যাতনের জন্য সরাসরি দায়ী।

ইরাবতি : আরেকটা প্রশ্ন, যদি তার সাথে সত্যিই কোনো খারাপ কিছু ঘটে, তাহলে আপনি কী করবেন?

কিম অ্যারিস : আসলে মৃত্যু ছাড়া এখন আর তার জন্য পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কিছু নেই। আর আমি পুরোপুরি প্রস্তুত আছি, যাই ঘটুক না কেন, মিয়ানমারের জন্য কাজ চালিয়ে যাব।

ইরাবতি : সাম্প্রতিক এক পোস্টে আপনি বলেছেন, আরাকান আর্মির প্রধান আপনার সাথে সাক্ষাতে অং সান সু চির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি কি তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছে?

কিম অ্যারিস : হ্যাঁ, অনেকে নিয়েছে। এখনই বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন এবং সহমর্মিতা জানিয়েছেন।

আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, যদিও মনে হতে পারে যে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের সমস্যাগুলো ভুলে গেছে, আসলে বিষয়টা এমন নয়। হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত মিয়ানমারের জন্য যা কিছু সম্ভব, তা করে যাচ্ছেন। তুমি হয়তো তা জানো না। কারণ তাদের কাজগুলো দেখা কঠিন, আর সবসময় মিডিয়ায় আসে না। কারণ অনেক সময় তাদের কাজ গোপন রাখতে হয়। কিন্তু তারা আছেন এবং তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

আর মিয়ানমার অবশ্যই স্বাধীন হবে। আমরা মিয়ানমারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখব। এটা সময় নিচ্ছে অনেক বেশি, আর এ পথে অকারণ রক্তপাত হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তা বন্ধ হবে। আমি প্রার্থনা করি, একদিন আমি মিয়ানমারে ফিরব, সবাই মিয়ানমারে ফিরবে, আর আমরা শান্তি পাব।

সূত্র: ইরাবতি