পবিত্র কোরআনের বহুমুখী শিক্ষাদানে বাংলাদেশ যে অনন্য, তা শুধু স্থানীয় হাফেজরাই নন; বরং এটি প্রমাণ করছেন এ দেশে পড়ুয়া বিদেশী শিক্ষার্থীরাও। তার সবশেষ উদাহরণ ভারতের হাফেজ ক্বারী মনজুর আহমাদ। তিনি ক্রোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ৩১তম আন্তর্জাতিক কোরআন (ক্বিরাত) প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নয়া দিগন্তকে ক্বারী মনজুর আহমাদ জানান, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইউরোপের এই দেশটির রাজদধানী জাগরেবের ইসলামিক সেন্টারে প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানেই ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম উঠে আসে।
ক্বারী মনজুর আহমাদের বাড়ি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলায়। তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত মা’হাদুল ক্বিরাত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও বিশ্বখ্যাত ক্বারী শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারীর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ছয় বছর ক্বিরাত বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউ টাউনে অবস্থিত ‘খিদমাতুল কোরআন ইন্সটিটিউট’ নামে একটি মাদরাসা পরিচালনা করছেন।
ক্রোয়েশিয়ার এবারের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে মোট চারটি গ্রুপে ৪৭টি দেশের ৭২ জন প্রতিযোগী অংশ নেন এবং সেখান থেকে প্রতিটি গ্রুপে তিনজন করে সর্বমোট ১২ জন বিজয়ী হন। এতে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেয়া ক্বারী মনজুর আহমাদও বিজয়ীদের মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন। তাদের গ্রুপে বাকি দুই পুরস্কার লাভ করেন তুরস্ক (প্রথম) ও ইন্দোনেশিয়ার (দ্বিতীয়) দুই প্রতিনিধি।
ক্বারী মনজুর আহমাদ বাংলাদেশের মা’হাদুল ক্বিরাতে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ছাত্রের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার এখানকার শিক্ষক শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী। বিগত সময়ের স্মৃতিচারণ করে নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, সে এবং ভারতের আরেকটা ছাত্র একে মনজুর ভিসা নিয়ে আমার কাছে পড়তে আসে। তাদেরেকে আমি রিওয়ায়েতে হাফস, আরবি সুরবিদ্যাসহ ক্বিরাতের সবগুলো বিষয়ই হাতেকলমে শিখিয়েছি।

শায়খ আযহারী আরো বলেন, আমার এই দুই ছাত্র ভারতের পরিবেশে অনেক বড় খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। বিশ্বের বড় বড় আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় এ দুজনই ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। এটি বাংলাদেশ এবং আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, তারা আমাদের দেশে পড়ে বিশ্ব দরবারে পবিত্র কোরআনের আলো ছড়াচ্ছে।
ক্বারী মনজুর আহমাদ এর আগেও তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং প্রশংসিত হন। তবে তার এবারের অর্জন অনন্য। ক্রোয়েশিয়ার ইসলামিক সেন্টারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ভারত এবারই প্রথম উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।’ আর সেটি হয়েছে বাংলাদেশেরই হাত ধরে।