শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরো অন্তত ২০০ মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে দেশটি অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে। এরপরই সেখানে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, এক লাখ আট হাজার মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির এক তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নেই। ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার পর সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। কেলানি নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় কিছু এলাকায় আরো লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
এবারের বন্যা ও এর জের ধরে হওয়া ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ক্যান্ডি ও বাডুল্লা এলাকায়। এখনো এ দুটি এলাকার বহু জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।
মাসপান্না এলাকার বাডুল্লা গ্রামের সামান কুমারা বলেছেন, ‘আমরা গ্রাম ছাড়তে পারছি না। আবার কেউ এখানে আসতেও পারছে না কারণ ভূমিধসে সব সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোনো খাবার নেই, শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশুদ্ধ পানিও।’
পুলিশ বলছে, নিহতদের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ১১ জন বাসিন্দাও রয়েছেন। শনিবার দুপুরে কুরুনেগালা অঞ্চলের একটি জেলায় ওই বৃদ্ধাশ্রম বন্যার পানিতে ডুবে যায়।
এদিকে অনুরাধাপুরে বন্যার পানিতে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় একটি বাস থেকে ৬৯ জনকে উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে। বার্তাসংস্থা এএফপিকে ওই বাসের একজন যাত্রী বলেছেন, নৌবাহিনী তাদের পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের ছাদে উঠতে সহায়তা করেছে।
শ্রীলঙ্কার সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে থাকা শ্রীলঙ্কানদেরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে। দেশটিতে এখন মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মৌসুম চলছে। তবে এই মৌসুমে এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতি সেখানে অনেকটাই বিরল।
এর আগে, ২০০৩ সালে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল দেশটি। তখন ২৫৪ জন মারা গিয়েছিলেন আর বাস্তুহারা হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
এবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষ এ দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন বিভাগ বিদেশী নাগরিকদের ভিসা নিয়ে জরুরি বার্তা দিয়েছে।
শনিবার ঢাকায় অবস্থিত শ্রীলংকার হাইকমিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশীদের জন্য বিশেষ ভিসা সুবিধা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, যেসব বিদেশী নাগরিকদের ২৮ নভেম্বর বা তার পরে শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করার কথা ছিল, কিন্তু ফ্লাইট বাতিল বা আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণ অসুবিধার কারণে তারা তা করতে পারেননি, তাদের ভিসা এক্সটেনশন ফি এবং ওভারস্টে জরিমানা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।
এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেইসব ভ্রমণকারীদের সহায়তা করার জন্য, যারা অনিবার্য কারণে বিলম্বের শিকার হয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার ভোর থেকে দেশজুড়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া বেশিরভাগ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে জনজীবন।
সূত্র : বিবিসি



