১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই তৎকালীন মহারাজা হরি সিংয়ের সেনার গুলিতে ২২ কাশ্মিরি আন্দোলনকারীর নিহত হওয়ার দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালনের রেওয়াজ রয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরে। এদিনই ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন জম্মু ও কাশ্মির সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিধায়ক এবং ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের ‘শহিদ দিবস’ পালন থেকে বিরত রাখার জন্য গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহের কটাক্ষ, ‘সরকার এত ভয় পায় কেন?’
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের বিভাজন ঘটিয়ে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন তথা ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘শহিদ দিবসে’র ছুটি বাতিল করেছিল। এবার নির্দিষ্ট দিনটির আগেই উপত্যকার লেফ্টেন্যান্ট গভার্নরের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘শহিদ দিবস’ পালন করা যাবে না। ‘শহিদদের’ কবরস্থান মাজার-ই-শুহাদায় প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী।
এক্সবার্তায় ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িগুলো বাহির থেকে তালা বন্ধ করে দেয়া অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, জেলরক্ষক এবং শ্রীনগরের প্রধান সেতুগুলো অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব কিছু মানুষকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সমাধিক্ষেত্রে যেতে বাধা দেয়ার জন্য করা হয়েছে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারেনি না যে সরকার কেন এত ভয় পায়!’
কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী আর লেখেন, ‘১৩ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড আমাদের জালিয়ানওয়ালাবাগ। যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তা করেছিলেন। তখন কাশ্মির ব্রিটিশদের অধীনে শাসিত হচ্ছিল। কতই না দুঃখের বিষয় যে প্রকৃত বীরেরা যারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, আজ তাদের খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কারণ, তারা মুসলিম ছিলেন। আজ যতই তাদের কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানানো থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হোক, আমরা তাদের আত্মত্যাগ ভুলব না।’
উল্লেখ্য, ওমরের মতোই ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান মুখপাত্র তথা বিধায়ক তানভীর সাদিক, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতো কাশ্মিরি নেতারা এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মিরের শহিদ দিবসের সাথে সম্পর্ক রয়েছে ১৯৩১ সালের এক রক্তক্ষয়ী দিনের। ব্রিটিশ আমলে জম্মু ও কাশ্মিরের মহারাজার বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাতে মৃত্যু হয়েছিল ২২ কাশ্মিরির। তাঁদের স্মরণেই ১৩ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ভূস্বর্গে। তবে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মির থেকে ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করার পরে এই প্রথা জোর করে বন্ধ করা হচ্ছে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন