পানি কূটনীতিতে বহুপাক্ষিকতা : বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও ভারতের ভবিষ্যৎ

গত ২০ জুন বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত নদী ও আন্তর্জাতিক হ্রদগুলোর সুরক্ষা এবং ব্যবহারবিষয়ক কনভেনশনে (পানি কনভেনশন) যোগদানকারী প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই চুক্তিটি আন্তঃসীমান্ত জলাধারগুলোর সুষ্ঠু এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রণীত হয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
পানি কূটনীতিতে বহুপাক্ষিকতা
পানি কূটনীতিতে বহুপাক্ষিকতা |সাউথ এশিয়ান ভয়েস

সাম্প্রতিক দিন ও সপ্তাহগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের লক্ষণ দেখা গেলেও দ্বিপক্ষীয় তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা অনেকের চোখ এড়িয়ে গেছে। গত ২০ জুন বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত নদী ও আন্তর্জাতিক হ্রদগুলোর সুরক্ষা এবং ব্যবহারবিষয়ক কনভেনশনে (পানি কনভেনশন) যোগদানকারী প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই চুক্তিটি আন্তঃসীমান্ত জলাধারগুলোর সুষ্ঠু এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রণীত হয়েছে।

পানি কনভেনশনটি ১৯৯২ সালে জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক কমিশন ফর ইউরোপের (ইউএনইসিই) তত্ত্বাবধানে একটি আঞ্চলিক কাঠামো হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এটি মূলত আঞ্চলিক চুক্তি হলেও ২০১৬ সালে জাতিসঙ্ঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই কনভেনশন অনুযায়ী, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে অবশ্যই আন্তঃসীমান্ত পানিসম্পদ যুক্তিযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহার করতে হবে, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর যাতে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি না হয়, তা প্রতিরোধ করতে হবে।

বাংলাদেশের (পানি কনভেনশনে) যোগদানের সময়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন এই অঞ্চলে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। একইসাথে গত এপ্রিলে পেহেলগাম উগ্রবাদী হামলার পর পাকিস্তানের সাথে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি (IWT) স্থগিত রাখার ভারতীয় সিদ্ধান্তের ফলে একটি তীব্র আইনি ও কূটনৈতিক বিতর্ক চলছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনীতি এবং পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট পানি সঙ্কট যখন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, তখন পানি কনভেনশনে বাংলাদেশের এই অন্তর্ভুক্তি একটি নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই বাস্তবতাটি হলো, এই ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে শুধু দ্বিপাক্ষিকতাবাদ দিয়ে ভারতের পানি-রাজনৈতিক স্বার্থ আর রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের প্রেরণা

পানি কনভেনশনে যোগদানের পেছনে বাংলাদেশ যে আশু কারণগুলো উল্লেখ করেছে, সেগুলো হলো- পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পানির বাড়তি চাহিদা। এই কারণগুলো পানি-সহযোগিতাকে একটি অপরিহার্য প্রয়োজনে পরিণত করেছে।

৫৭টি নদী সমৃদ্ধ একটি ভাটির দেশ হিসেবে এই কনভেনশনে যোগদান বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেদের পানিসংক্রান্ত উদ্বেগগুলোকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে এবং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মতো নদী ব্যবস্থাপনার জন্য আরো শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরির দাবি জানাতে চায়।

ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশকে তার মিষ্ট পানির চাহিদার জন্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়, যা দেশটির পানি ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে। বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশকে যেমন বিধ্বংসী বন্যার লাগাতার হুমকির মুখে পড়তে হয়, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে তীব্র খরার সম্মুখীন হতে হয়, যা দেশের কৃষি ও পানি নিরাপত্তা- উভয়কেই ঝুঁকির মুখে ফেলে।

পানি কনভেনশনে বাংলাদেশের যোগদান একটি নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে শুধু দ্বিপাক্ষিকতাবাদ দিয়ে ভারতের পানি-রাজনৈতিক স্বার্থ আর রক্ষা করা সম্ভব নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান তীব্র প্রভাব এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পানির বাড়তি চাহিদা বাংলাদেশের পানি সঙ্কটকে আরো জটিল করে তুলেছে। যদিও বাংলাদেশ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউএনইসিই’র চুক্তি কাঠামোর সাথে কাজ করার কথা তুলে ধরেছে, তথাপি দক্ষিণ এশিয়ায় পানি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রধান আলোচনাগুলো ১৯৯৭ সালের ‘জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহের অ-নৌপরিবহনযোগ্য ব্যবহার আইনসংক্রান্ত কনভেনশন-ইউএনডাব্লিউসি-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। এর প্রধান কারণ হলো, ইউএনইসিই চুক্তিটি যেখানে ইউরোপের একটি আঞ্চলিক কনভেনশন হিসেবে শুরু হয়েছিল, সেখানে ইউএনডাব্লিউসি একটি বৈশ্বিক চুক্তি।

জাতিসঙ্ঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশনের (ইউএনডব্লিউসি) পরিবর্তে ওয়াটার কনভেনশনে যোগদানের পেছনে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো, এই কনভেনশনটি নিছক আইনি রীতিনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে টেকসই ও ন্যায্য পানি ব্যবস্থাপনার জন্য শক্তিশালী কার্যপদ্ধতি, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার ওপর জোর দেয়।

এই চুক্তির অধীনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আন্তঃসীমান্ত পানির ব্যবহার, সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার জন্য যৌথ প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হয় এবং ‘মিটিং অব দ্য পার্টিস’-এর মাধ্যমে তারা প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে।

২০১৬ সাল থেকে ওয়াটার কনভেনশনটি অ-ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে ইরাক, নামিবিয়া, ঘানা এবং সেনেগালের মতো ১৫টি অ-ইউরোপীয় দেশ এই কনভেনশনের পক্ষভুক্ত হয়েছে এবং আরো ২০টিরও বেশি দেশ যোগদানের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের প্রভাব

ভারত ওয়াটার কনভেনশন বা ইউএনডব্লিউসি (UNWC) কোনোটিরই সদস্য নয়। দেশটি বরাবরই এই অবস্থানে অনড় যে পানি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় না। বরং এটি রাজ্য সরকারের বিষয়। এই অবস্থান আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এর কারণ হলো, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়েও আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করার অনুমতি দিলেও তা বাস্তবায়নের জন্য রাজ্যগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণেই প্রস্তাবিত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়।

ভারত সবসময় তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার বিরোধী এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে পানি সমস্যা সমাধানের পক্ষে। যেমন, পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি চুক্তি এবং বাংলাদেশের সাথে ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি (GWT) উল্লেখযোগ্য।

তবে ভারতের এই দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি বর্তমানে বেশ চাপের মুখে রয়েছে। পেহেলগামে বেসামরিক নাগরিক হত্যার পর ভারত পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। নেপালের সাথে মহাকালী চুক্তিও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে বাস্তবায়নসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্র নদের (চীনে ইয়ারলুং সাংপো) ওপর চীনের বাঁধ নির্মাণের কারণে দেশটির সাথে ভারতের পানি-রাজনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে উত্তপ্ত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ভারত ও বাংলাদেশের জন্য বন্যার আশঙ্কাসহ মারাত্মক পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

চীনের এই বাঁধ নির্মাণের জবাবে ভারত ব্রহ্মপুত্রের উপনদী সিয়াং-এর ওপর নিজস্ব বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা ভারত, চীন ও বাংলাদেশের জন্য আরো গুরুতর পরিবেশগত ও ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তি (GWT) নবায়নের সময়সীমা আসছে। ২০২৪ সালের জুনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঘোষণা দেন যে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার শিগগিরই এই নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে নয়াদিল্লি শুধু নবায়নের পরিবর্তে একটি নতুন চুক্তির কথা ভাবছে। যেখানে সেচ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, তবে লক্ষ্য করা যেতে পারে যে সিন্ধু পানি চুক্তি (IWT) স্থগিত রাখার পাশাপাশি ভারতের এই নতুন পদক্ষেপ পানি বণ্টনে নয়াদিল্লির সদিচ্ছার অভাবের একটি ধারণা দিচ্ছে। এমন ধারণা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ওয়াটার কনভেনশনে যোগদানের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে, যদিও এই দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ যোগসূত্রের সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই।

ভারত বর্তমানে তীব্র পানি সঙ্কটের সম্মুখীন, যেখানে বিহার এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলো দীর্ঘস্থায়ী পানি ঘাটতিতে ভুগছে। আকস্মিক বন্যা এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার মতো ঘটনা জনবহুল হিমালয় অঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি এবং খাদ্য ও পানির নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। ভারত যদিও অভ্যন্তরীণভাবে বা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এটি স্পষ্ট যে পানি-রাজনীতি এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাব কোনো সীমানা মানে না।

উজান অঞ্চলের দেশ হিসেবে ভারত এখনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর নির্ভর করে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং আঞ্চলিক পানি-রাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে এই দ্বিপক্ষীয় নীতি এখনো নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত।

আঞ্চলিক প্রভাব

পানি কনভেনশনে বাংলাদেশের যোগদান একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক তাৎপর্য বহন করে, যা আন্তঃসীমান্ত নদীর সম্মিলিত ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও এই অঞ্চলের পথিকৃৎ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরছে। বাংলাদেশ সম্ভবত পানি কনভেনশনের বিধানগুলোকে ভিত্তি করে ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমের বরাদ্দের বাইরে আরো ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং জলবায়ু-সহনশীল একটি চুক্তির জন্য জোর দেবে।

বর্তমানে চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে উভয় দেশ পর্যায়ক্রমে ১০ দিন করে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পেয়ে থাকে। পানি কনভেনশনের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ঢাকা এখন নদীর নিয়ন্ত্রিত পরিবেশগত প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং একটি আইনত বাধ্যতামূলক বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার ওপর জোর দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদি ভারত পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে এই ধরনের আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার দাবিগুলো মেনে না নেয়, তবে দেশটি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে এবং জলবায়ুবিষয়ক আলোচনায় তার বৈশ্বিক নেতৃত্ব ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যদি ভারত পানিবণ্টনে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিগুলো উপেক্ষা করে, তবে দেশটি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে এবং জলবায়ুবিষয়ক আলোচনায় তার বৈশ্বিক নেতৃত্ব ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ সম্ভবত নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও ইউএনইসিই (UNECE) কাঠামোতে যোগ দিতে উৎসাহিত করবে। অতীতে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ইউএন ওয়াটার কনভেনশন (UNWC) উত্থাপন করা হলে ভারত ও পাকিস্তান ভোটদানে বিরত থাকলেও বাংলাদেশ, নেপাল ও মালদ্বীপ একে সমর্থন করেছিল। এই পূর্ব-ইতিহাসের কারণে এটি খুবই সম্ভব যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও পানি কনভেনশনে যোগ দেবে। এমন পদক্ষেপ আঞ্চলিক পানি-রাজনীতিকে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনার দিকে চালিত করবে, যা ভারতকেও এতে যোগ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো অববাহিকা-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, পরিবেশগত ঝুঁকি সমন্বয়ের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং উজানের দেশগুলোর কাছে স্বচ্ছতা দাবি করার মতো কোনো আইনি কাঠামো নেই। অতীতে দ্বিপাক্ষিকতাবাদ কার্যকর ছিল। কারণ তখন পানি-রাজনৈতিক বিরোধ সীমিত ছিল এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতাও এতটা তীব্র ছিল না। ফলে রাষ্ট্রগুলো বহুপাক্ষিক কাঠামোর জটিলতা ছাড়াই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে পারতো।

কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান পানি সঙ্কট এবং আরো বিভক্ত আঞ্চলিক রাজনীতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় ভারত এখন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দেশটি হয় পুরনো দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে পারে, যা অতীতে কার্যকর হলেও এখন ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে; অথবা দক্ষিণ এশিয়ায় পানি ব্যবস্থাপনা ও ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এজন্য নয়াদিল্লি পানি কনভেনশন বা ইউএনডব্লিউসি (UNWC)-তে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করে যাত্রা শুরু করতে পারে। এই পদক্ষেপ ভারতকে একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম করবে, যা ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত ও উন্নয়নমূলক চাপের মাঝেও আন্তঃসীমান্ত পানির টেকসই ব্যবহার এবং শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সাউথ এশিয়ান ভয়েস থেকে অনুবাদ করেছেন নাজমুস শাহাদাত