দ্বিপক্ষীয় অংশীদ্বারিত্বকে আরো মজবুত করার লক্ষ্যে যৌথ সফরে আগ্রহী ভারত ও যুক্তরাজ্য। এমনটাই জানিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশই তাদের সম্পর্ককে ‘গুরুত্ব’ দিয়ে জুলাই মাসে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকার পর অবশেষে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা।
সেই অংশীদারিত্বকেই আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে যুক্তরাজ্য ও ভারত দুই দেশই যে সচেষ্ট, তার প্রমাণ মিলেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের দু’দিনের ভারত সফরে। শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদলকে সাথে নিয়ে বুধবার মুম্বাইয়ে এসে পৌঁছান তিনি। সেই প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকের পাশাপাশি গত দু’দিনে একাধিক বৈঠক করেছেন স্টারমার। ‘ইন্ডিয়া-ইউকে সিইও ফোরাম’-এর বৈঠক এবং গ্লোবাল ফিনটেক সামিটেও অংশ নিয়েছেন। ভারতের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য নেতাদের সাথে প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতে কিয়ার স্টারমারের এটাই প্রথম সফর। সফরের শেষদিনে ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্যের সাথে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি। এর আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যুক্তরাজ্যের তৈরি হাল্কা ওজনের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের ফলে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ডে সরাসরি ৭০০টিরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের জন্য বেলফাস্টে তৈরি অস্ত্রের সমকক্ষ বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারত সফরের সময় স্টারমার জানিয়েছিলেন, ভারতীয় কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা নীতিতে কোনোরকম শিথিলতা দেয়া হবে না। এই মন্তব্যের প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পরবে কি-না তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে দুই দিনের সফরে ভারতে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চালু থেকে শুরু করে সে দেশে বলিউড ছবির শ্যুটিংসহ একগুচ্ছ ঘোষণার পর অবশ্য সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে।
কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে?
সফরের দ্বিতীয় ও শেষদিনে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভারত ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই তালিকায় রয়েছে, নির্মাণ, অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য শক্তি, উন্নত উৎপাদন, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, আর্থিক ও পেশাদার ব্যবসায়িক পরিষেবা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দুই দেশের বিনিয়োগ।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার বিষয়েও জোর দেয়া হয়েছে। মোদি বলেন, ‘আজ আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা সময়ের আগেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।’
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা
দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রসঙ্গে এমন এক ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে, যার আওতায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর যোগ্য ফ্লাইং প্রশিক্ষকদের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সম্পর্ককে সহজতর এবং শক্তিশালী করে তুলতে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য সামুদ্রিক বৈদ্যুতিক চালনা ব্যবস্থা উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়ে ভারত-যুক্তরাজ্য আন্তঃসরকারি চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল (এলএমএম) সিস্টেমের প্রাথমিক সরবরাহের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটি পুনর্গঠনের জন্য টার্মস অফ রেফারেন্স স্বাক্ষর হয়েছে, যা একটা বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি