বিহারে মোদির জোটের ভূমিধস জয়

বিহারে ২৪৩টির মধ্যে ২০২টি আসন জিতে মোদির এনডিএ জোট রেকর্ড বিজয় পেয়েছে, যেখানে নারী ভোট ছিল জয়ের মূল চালিকা শক্তি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বিহারে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে রেকর্ড জয়ের স্বাদ
বিহারে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে রেকর্ড জয়ের স্বাদ |সংগৃহীত

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে রেকর্ড জয়ের স্বাদ। এনডিএ জোট ২৪৩টির মধ্যে ২০২টি আসন জয় করে ইতিহাস গড়েছে। ফলে রাজ্যের রাজনীতিতে আরো শক্ত অবস্থান তৈরি করল মোদির বিজেপি।

গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। পরে রাতে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে, গত ৬ নভেম্বর প্রথম দফায় ১২১ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ দফায় ভোট পড়ে ৬৫ শতাংশের বেশি। পরে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১২২টি আসনে। এ দফায় ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশের বেশি। দু’দফা মিলিয়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে এই নির্বাচনে।

এনডিএ জোটের সবচেয়ে বড় শরিক দল বিজেপি জয় পেয়েছে ৮৯টি আসনে। জোটের দ্বিতীয় শরিক এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ ৮৫টি আসানে জয় পয়েছে। এছাড়া বিহারের রাজনীতিবিদ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ১৯টি এবং আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন রাম মাঝির নেতৃত্বাধীন আওয়াম মোর্চা পার্টি জিতেছে ৫টি আসনে।

নির্বাচনী ফল ঘোষণা হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটি শুধু আমাদের জোটের জয় নয়, গণতন্ত্রেরও জয়।

নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ- যে প্রকৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেয়া হচ্ছে। বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন উভয়েই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে বিহারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৬.৯১ শতাংশ। এ রাজ্যের ভোটারদের মাঝ বয়স মাত্র ২২ বছর, যা ভারতজুড়ে সবচেয়ে কম।

এনডিএ জোটে জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ বিজেপির প্রধান সহযোগী হিসেবে ছিল। দু’দল দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য শাসন করছে। জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার ছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কয়েকটি আঞ্চলিক দল ছিল বিরোধী মহাজোটে।

এবারের বিপুল জয়ের পেছনে নারীর ভোট বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকদের মত। মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক নারী এবং এবার তাদের ভোটদান ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ৭১.৬ শতাংশ। দু’টি জোটই নারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও কল্যাণমূলক নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও নীতীশ কুমারের কল্যাণমূলক কর্মসূচিই নারীদের বেশি আকৃষ্ট করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিহার ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য, ৭ কোটি ৪০ লাখের বেশি নিবন্ধিত ভোটারের বড় একটি অংশই কাজের সন্ধানে দেশের অন্যান্য রাজ্যে পাড়ি জমান। এত বিশাল ভোটারগোষ্ঠীর মধ্যে বিজেপি এখনও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু এবারের জোটগঠনের সাফল্যে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরো শক্ত করেছে তারা।

বিরোধীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফলের বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে এই নির্বাচনের ফল আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও তামিলনাড়ুর গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের আগে বিজেপিকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে বলে এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র : বিবিসি ও এনডিটিভি