থাই মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডে অবস্থানরত মিয়ানমার শরণার্থীদের কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। শরণার্থীদের খাদ্য ও আশ্রয় সরবরাহকারী প্রধান সংস্থা দ্য বর্ডার কনসোর্টিয়াম (টিবিসি) এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছন। শরণার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হওয়া ও শিবিরের জীবনের বাইরে মর্যাদাপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।
টিবিসির তথ্য অনুসারে, থাইল্যান্ড মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নয়টি শরণার্থী শিবিরে ১ লাখ ৭ হাজারের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। টিবিসি জানিয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে মিয়ানমারের সামরিক নির্যাতনের কারণে তারা এখানে পালিয়ে এসেছে।
কয়েক দশক ধরে থাই সরকার শরণার্থীদের কাজ করা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ও সরকারি পরিষেবা গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছিল। যার ফলে তারা বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল।
এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহায়তা কমানোর পর থেকে থাইল্যান্ডে অবস্থানরত মিয়ানমার শরণার্থীদের জীবনযাত্রা আরো সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টিবিসির নির্বাহী পরিচালক লিওন ডি রিডম্যাটেন দ্য ইরাবতিকে জানান, কনসোর্টিয়ামের সামগ্রিক বাজেট দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ইরাবতির এক সাক্ষাৎকারে রিডম্যাটেন বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে থাই কর্তৃপক্ষকে বলে আসছি যে আর কোনো বিকল্প নেই। সংকট রোধ করতে চাইলে মানুষদের বাইরে কাজ করতে দিতে হবে।’
তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে তিনি থাই সরকারকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের বাইরে কাজ করার অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করে আসছেন। তখন তিনি টিবিসি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
রিডম্যাটেন বলেন, গত কয়েক মাস সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করার পর এখন তারা একমত হয়েছে। এটি একটি বড় পরিবর্তন। আমি খুবই খুশি। এটা শরণার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিরাট অর্জন।

থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে মে সোটের মে লা শরণার্থী শিবিরে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন দুই কারেন শরণার্থী
ইরাবতি : থাই সরকারের দীর্ঘদিন অবস্থানকারী মিয়ানমার শরণার্থীদের কাজ করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন সুসংবাদ?
লিওন ডি রিডম্যাটেন : সুখবর হলো, থাই সরকার প্রথমবারের মতো বিবেচনা করেছে যে শরণার্থীরা এই দেশে থাকবে এবং তাদের বাইরে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত। এটাই তাদের আত্মনির্ভরশীল ও স্বাধীন হওয়ার একমাত্র উপায়। এতে বছরের পর বছর ক্যাম্পে থাকতে হবে না।
আগে থাই সরকার কেবল ভেবেছিল যে এই শরণার্থীরা হয় তৃতীয় কোনো দেশে যাবে, নয়তো মিয়ানমারে ফিরে যাবে। এখন তাদের মন ও নীতি পরিবর্তন হয়েছে। এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে টিবিসি খাদ্যের যোগান দিতে পারছে না।
আমি থাই কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। যদি সংকট রোধ করতে চান, তবে শরণার্থীদের বাইরে কাজ করতে দিতে হবে। কারণ এক সপ্তাহে একজন যে আয় করতে পারে, তা পুরো পরিবারকে এক মাসে যা দেয় তার চেয়েও বেশি। তারপর তারা এটি অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি এটি খুবই ইতিবাচক।
ইরাবতি : নতুন নীতি বাস্তবায়নে কি কোনো অসুবিধা হবে? এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? আপনি কি মনে করেন তারা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই থাকবে? এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কি তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে বদলে যাবে?
লিওন ডি রিডম্যাটেন : আমি বর্তমান শরণার্থী কমিটি ও শিবির পরিচালনাকারীদের সাথে একটি বৈঠক করেছি। আমার মনে হয় তারা বুঝতে পেরেছেন যে আমেরিকায় পুনর্বাসন খুব শিগগিরই হবে না। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা তারা ভাবছেন না কারণ সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। তাই একমাত্র উপায় হলো এখানে থাকা ও সুন্দর জীবনযাপন করা। এই কারণেই এই সিদ্ধান্তটি খুবই ইতিবাচক। ৪০ বছর পর একটি সুযোগ দিয়েছে। তাই আমি বলেছি পদ্ধতিগুলো খুবই ব্যবহারিক হতে হবে।
আমার মনে হয় একটি আইনি দলিলের প্রয়োজন, যাতে বাইরে গিয়ে কাজ করা যায়। এর জন্য নজরদারি বা রিপোর্টিং ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে শরণার্থী কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা জানা যাবে। তাই আমি মনে করি, এই ধরণের পদ্ধতিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
টিবিসি সংস্থাকে এই সব কিছুতে সম্পূর্ণভাবে জড়িত থাকতে হবে। বিদেশী দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে।
ইরাবতি : নতুন নীতির খবরে শরণার্থীদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?
লিওন ডি রিডম্যাটেন : তারা এই ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক ও উৎসাহী ছিল। যদিও অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে তাদের জন্য আমেরিকায় পুনর্বাসনই সর্বোত্তম। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে, সেটি দ্রুত হবে না। তাই এই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে আগ্রহী।
তাদের একমাত্র দুশ্চিন্তা হলো— প্রক্রিয়াটি কীভাবে হবে। যেমন- পরিবারের প্রধান বাইরে কাজ করতে গেলে পরিবারকে সাথে নেবে কি না। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি, প্রথমে একা যান, পরে যখন নিরাপদ মনে হবে, তখন পরিবারকে নিন।
এটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় অর্জন। আমি তাদের বলেছি, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনাদের ও সরকারকে সহায়তা করতে। সব মিলিয়ে এটা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো খবর।