ইরানের ওপর ১০ বছর আগে তুলে নেয়া নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনছে ৩ দেশ

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা আবারো বেড়ে যাওয়ায় জাতিসঙ্ঘের প্রধান নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ইরানের একটি সরকারি ভবনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ইসরাইলের হামলায় নিহত বিজ্ঞানীদের ছবি
ইরানের একটি সরকারি ভবনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ইসরাইলের হামলায় নিহত বিজ্ঞানীদের ছবি |সংগৃহীত

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা আবারো বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় প্রত্যাহার করা জাতিসঙ্ঘের প্রধান নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। এই পদক্ষেপে তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ (আগে কোনো এক সময় জারি করা নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করা) সক্রিয় হবে, যার ফলে ৩০ দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসতে পারে।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি প্রধানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করার কোনো আইনগত এখতিয়ার এই তিন দেশের নেই। রাশিয়া ও চীন ইরানের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো লিখেছেন, অন্য পক্ষগুলো যদি সদিচ্ছা প্রদর্শন করে তবে ইরান তার কর্মসূচি নিয়ে ‘ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ’ আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত।

আগস্টের শেষ নাগাদ কূটনৈতিক সমাধানে ইরান রাজি না হলে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবে বলে দুই সপ্তাহ আগেই দেশটিকে সতর্ক করেছিল ২০১৫ সালের চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী তিন ইউরোপীয় দেশ।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ’র সাথে চলমান প্রক্রিয়াকে ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে’। তারা একে ‘উসকানিমূলক ও অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা’ আখ্যায়িত করে বলেছে এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।

এদিকে, গত জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণ আর তারপর ইরানে জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আর আলোচনা শুরু হয়নি।

জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত এক চুক্তির আওতায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করে আনার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল। তবে চুক্তিটিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়। একইসাথে ২০১৮ সালে তার প্রথম মেয়াদে পুনরায় পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। জবাবে ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম জোরদার করে, যা সংকট নতুন করে উসকে দেয়।

২০১৫ সালের চুক্তিতে স্ন্যাপব্যাক ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর আওতায় চুক্তিতে অংশ নেয়া কোনো দেশ যদি মনে করে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে করা অঙ্গীকার পালনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যর্থ হয়েছে, তবে তারা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি- সম্মিলিতভাবে ই৩ নামে পরিচিত এই তিন দেশ বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে এমন পদক্ষেপের কথা জানায়। এখন পরিষদের হাতে ৩০ দিন সময় রয়েছে। এর মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বহাল থাকবে নাকি তা বাতিল করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান ‘স্পষ্ট ও ইচ্ছাকৃতভাবে’ ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, সামরিক পর্যায়ের কাছাকাছি মাত্রায় বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের বিষয়ে ইরানের কোনো ‘বেসামরিক যুক্তি নেই’ এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সুস্পষ্ট হুমকি’ হয়ে আছে।

ই-থ্রি জানিয়েছে, আগামী ৩০ দিন তারা ‘প্রতিশ্রুতি মেনে চলার জন্য ইরানের যেকোনো উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিষয়ে’ দেশটির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ইরান নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়াতে যুক্তরাজ্য ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সম্প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি আরো বলেন, ইরান এসব শর্ত পূরণে ‘কোনো বাস্তবসম্মত প্রচেষ্টা’ নেয়নি এবং পারমাণবিক কর্মসূচির প্রকৃতি নিয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস দিতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে’।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, আগের চুক্তি রক্ষা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে দেশটি ‘সর্বোচ্চ সংযম ও অবিচল কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ প্রদর্শন করেছে। তেহরান স্ন্যাপব্যাক ধারা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের আথে আলোচনায় বসতে তারা প্রস্তুত।

অন্যদিকে স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা সম্পন্ন করতে ই-থ্রি’র সাথে কাজ করার কথাও জানিয়েছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর এক মুখপাত্র বলেন, ‘একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। যাতে ইরান ইস্যুতে একটি শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধান পাওয়া যায়।’

পাশ্চাত্য শক্তি ও আইএইএ বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়। তবে ইরান দৃঢ়ভাবে দাবি করছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না আর তাদের কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক।

সূত্র : বিবিসি