গাজা যুদ্ধের প্রভাবে ইসরাইলে প্রতি চারজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছে

গাজা যুদ্ধের প্রভাবে দুই মিলিয়ন ইসরাইলি মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
গাজা থেকে ফেরত ইসরাইলি সেনারা
গাজা থেকে ফেরত ইসরাইলি সেনারা |সংগৃহীত

গাজা যুদ্ধের প্রভাবে ইসরাইলে প্রতি চারজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছে। শুক্রবার দেশটির গণমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলজুড়ে মানসিক সমস্যার সুনামি বইছে। দিন দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর প্রভাবে ভেঙে পড়ছে পরিবার ও সমাজ। এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরাইলি মানসিক চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলে মানসিক চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। এটি দেশকে বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

গত সপ্তাহে মানসিক চিকিৎসকদের আটটি সংস্থা ইসরাইলি সরকারকে সতর্ক করেছে। তারা বিবৃতিতে মানসিক রোগের প্রকট প্রাদুর্ভাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। একইসাথে এই সঙ্কটকে বিপর্যয়কর বলেও অবিহিত হবে। পাশাপাশি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলে এখন ব্যাপক মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সঙ্ঘাতের ফলে মানুষের মাঝে প্রবল হতাশা, উদ্বেগ ও গ্লানি ভর করেছে। এতে পরিবার ও সমাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত পিটিএসডি রোগ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইনগুলোতে কল বিগত সময়ের চেয়ে ছয় গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্ল্যালিট হেলথ সার্ভিসেস এবং মায়ার্স-জেডিসি-ব্রুকডেল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ অক্টোবরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ শতাংশ আজও মানসিক ট্রমায় ভুগছে। সাধারণ জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে গুরুতর কার্যকরী প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে থেরাপি সেশনে রোগী ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বল্পমেয়াদী সাইকোথেরাপির ঘটনা ৪৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যেটি ২০২২ সালে ছিল ৩,৫০০। আর ২০২৪ সালে তা ২০ হাজারে পৌঁছেছে।

তবে এই পরিসংখ্যান কেবল হেললাইন থেকে নেয়া চিকিৎসার ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। তবে মানসিক ডাক্তারদের সংস্থাগুলো বলছে, বাস্তব পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।

হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেরাভ রথ বলেছেন, ক্লিনিকগুলোতে শিশুদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, আসক্তি, বৈবাহিক সমস্যা এবং ক্রিয়াশীল আচরণের তীব্র বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

রথ বলেন, চারজনের মধ্যে একজন এখন মানসিক ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে এটি ছিল দশজনের মধ্যে একজন।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই