গাজায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তিকে কেন ভয় পাচ্ছেন নেতানিয়াহু

তুরস্ক গাজায় এখন কেবল সাময়িক মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই আসছে না। বরং এখন তারাই হবে গাজার প্রধান খোলোয়াড়।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
এরদোগান-নেতানিয়াহু
এরদোগান-নেতানিয়াহু |আল জাজিরা

ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সন্ত্রাস দমন ইউনিটের সাবেক প্রধান আওদিদ আইলাম বলেছেন, তুরস্ক গাজায় এখন কেবল সাময়িক মধ্যস্থতাকারী হিসেবেই আসছে না। বরং এখন তারাই হবে গাজার প্রধান খোলোয়াড়। এছাড়া গাজার নতুন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও তারা।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির সময় তুর্কি ভূমিকার প্রতি লক্ষ্য রেখেই তিনি কথাগুলো বলেছেন।

তুরস্ক সম্প্রতিই এই সমস্যা সমাধানে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গত দুই বছর ধরে কাতার ও মিসরই সমঝোতার চেষ্টা করে আসছিল। তবে তুরস্ক এতে যুক্ত হয়েই নিজেকে প্রধান আসনে সমাসীন করে নিতে সক্ষম হলো। সেজন্য মিসরের শার্ম আশ শায়খে যখন গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছিল, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগানের প্রশংসা করছিলেন।

ওয়াশিংটন ও আঙ্কারা মাঝে এই স্পষ্ট মাখামাখি -আরো নির্দিষ্ট করে বললে- ট্রাম্প ও এরদোগানের মাঝে এমন সম্প্রতি দখলদার শক্তির মাঝে একটি অস্বস্তি তৈরি করেছে। সেজন্যই আওদিদ আইলাম জোর দিয়ে সতর্ক করেছেন যে ট্রাম্পের সমর্থনে এরদোগান এই সঙ্কটকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে পারেন। যেমনটি ইতোপূর্বেও তিনি করে দেখিয়েছেন।

যুদ্ধোত্তর গাজার রক্ষাণবেক্ষণ, পুনর্গঠন ও গাজার নতুন প্রশাসনে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির মতো ইস্যুগুলোও ইসরাইলের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মিসগাভ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ নোয়া লাজিমি ইসরাইলি উদ্বেগ এভাবে প্রকাশ করেছেন-

‘তুরস্ককে গাজার যুদ্ধবন্ধ চুক্তিতে টেনে আনার অর্থ হলো এই স্বীকৃতি দেয়া যে তুরস্ক আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি; এবং এই বাস্তবতা মেনে নেয়া- মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তিমূলক চুক্তি তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে তুরস্ক ছাড়া আঞ্চলিক চুক্তি সম্ভবই নয়।’

তেল আবিব বুঝতে পারছে যে দৃশ্যপটে তুরস্কের উপস্থিতি ইরানের মতো নয়। কারণ, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। একই তো তাদের আদর্শিক পার্থক্য আছে। তদুপরি সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে তারা ভুলের রাজনীতি করেছে।

কিন্তু তুরস্ক এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তারা কূটনীতিতে সফলার স্বাক্ষর রেখেছে। যদিও আরব বসন্তের পর প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সাথে তুরস্কের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু আঙ্কারা এর কিছুদিন পর থেকেই সম্পর্কের উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। এখন তো গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একসাথে কাজ করারই সুযোগ পাচ্ছে। সেজন্য ইসরাইল ভালো করেই বুঝে গেছে যে ইরান যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, তুরস্ক তার মুখোমুখি হবে না।

ফলে ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষজ্ঞ এলি কারমন সতর্ক করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইসরাইলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে হুমকি তৈরি করবে। এটি ইসরাইলের জন্য সিরিয়ার পাশাপাশি নতুন সঙ্কট হিসেবে উপস্থিতি হবে।

মূলত ইসরাইলি এসব ভয়ের গভীরতা বুঝতে হলে মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের স্বার্থ পাঠ করতে হবে। বিশেষ করে গাজায় তাদের কৌশলগত স্বার্থ দেখতে হবে। তাহলেই ইসরাইলি ভয়ের গভীরতা সহজে ধরা সম্ভব হবে।

গাজায় তুরস্কের প্রথম কৌশলগত স্বার্থ হলো, তারা গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন ও বাসিন্দা উভয়কে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। এমনকি যদি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ করতেও হয়, তবুও তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চায় তুরস্ক।

কারণ, তুরস্ক মনে করে, এই প্রতিরোধ যোদ্ধারাই ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে প্রথম বাধা। এরা কেবল ফিলিস্তিনেরই রক্ষক নয়। বরং তাদের মাধ্যমে তুরস্কও সুরক্ষিত থাকবে। এজন্যই এরদোগান গত দেড় বছর আগে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে তাদের নিজেদেরই যোদ্ধাদের সাথে তুলনা করেছেন। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্কের স্বাধীনতার জন্য এরাই প্রথম কাতারে থেকে যুদ্ধ করেছিল।

সেজন্য তুরস্ক কখনোই চাইবে না যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের যুগ শেষ হোক। তবে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের স্বার্থে যদি প্রতিরোধ বাহিনীকে এখন কিছু সময়ের জন্য হিমায়িত করেও রাখতে হয়, তাহলে বাস্তবতাকে মেনে তা করবে। তবে স্থায়ীভাবে তাদের শেষ হতে দেবে না।

সূত্র : আল জাজিরা