পশ্চিমারা কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো

গত দুই বছর ধরে গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এর প্রতিবাদে ইউরোপে রাস্তায় নেমে এসেছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের প্রতিবাদ
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের প্রতিবাদ |আল জাজিরা

গত দুই বছর ধরে গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এর প্রতিবাদে ইউরোপে রাস্তায় নেমে এসেছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ। এ নিয়ে ইউরোপীয় অন্তত ২৫টি দেশের ৮০০ শহরে ৪৫ হাজারের বেশি প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর অধিকাংশগুলোতে দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একইসাথে তারা ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি সংহতিও জানিয়েছে।

ইউরোপের কোনো কোনো দেশে বড় ধরনের আন্দোলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই তালিকায় অগ্রভাগে রয়েছে ইতালি। সেখানে ১৮৬টি শহরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৬০০টি প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এরপরেই রয়েছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ দেশ জার্মানি। সেখানে ১৩১টি শহরে অন্তত ৫৯০০টি প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্স ও ব্রিটেনেও বড় বড় কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে নেদারল্যান্ডেও আড়াই লাখ মানুষের অংশগ্রহণে ইসরাইল বিরোধী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ইউরোপীয় অন্যান্ত শহরেও এই জাতীয় বিক্ষোভ সমাবেশ দেখা গেছে।

এসব আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে নতুন করে ১০টি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশ। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের ২৭টি দেশের ২২টি দেশের পক্ষ থেকেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া হলো।

তপেছনে কার ভূমিকা রয়েছে?

১. এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হলো বামপন্থার উত্থান

ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইউরোপের বামপন্থীদের সংহতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। অবশ্য আদর্শ কিংবা ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির দিক থেকে বামপন্থী সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না। কারণ, ইউরোপীয় বামপন্থীরা তিনটি ধারায় বিভক্ত- কট্টর বামপন্থী, সামাজিক বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক বামপন্থী রয়েছে।

কট্টর বামপন্থীরা সামাজিক ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাসী। তারা নব্য উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে কাজ করে; তারা দুর্বল ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলে; সংখ্যালঘু ও লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার থাকে; জাতিগত বৈষম্য, সামাজিক বিভাজন দূরীকরণে ভূমিকা রাখে এবং সামাজিক সমতা ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে।

এই মতাদর্শের বামপন্থীর সংখ্যা ইউরোপে খুব বেশি নয়। অবশ্য তারা বিভিন্ন সময় জোটে অংশগ্রহণ করে। এই বামপন্থীরাই ইউরোপে ফিলিস্তিনি সমর্থন আদায়ে মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এরাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

সামাজিক মধ্যপন্থী যারা আছে, তারাও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসছে। তবে তাদের ভূমিকা কট্টর বামপন্থীদের চেয়ে কম। তারাও সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সংখ্যালঘুদের প্রতি সংহতি, নিপীড়িতদের অধিকার আদায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জনগণের মৌলিক অধিকারকে বৃদ্ধি করা নিয়ে কাজ করে থাকে।

তবে এরা রাজনৈতিক সমঝোতায় প্রবেশ করে। জোটের মধ্যেও তারা অংশগ্রহণ করে। এজন্য জায়নিজমের অপরাধের বিরুদ্ধে তাদেরকে খুব শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় না। সেজন্য তারা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায়ও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে না।

গণতান্ত্রিক বামপন্থী যারা আছে, তারা সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের সাথে একত্রিত করার চেষ্টা করে। গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে তারা সামাজিক ন্যায়বিচারকে সমর্থন করে। মুক্ত বাজার, রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার প্রদানের মাঝে একটি মিশ্র অর্থনৈতিক চিন্তা লালন করে। তারা মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার নিয়েও কাজ করে।

এই রকম বামপন্থীরাই মূলত সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেয়। সেজন্য তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেয়া এবং ফিলিস্তিনি মানুষের অধিকারের পক্ষে কাজ করার ক্ষেত্রে কট্টরপন্থীদের চেয়ে কম প্রতিক্রিয়াশীল হয়।

সূত্র : আল জাজিরা