তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার অভিযানকে আরো সহজ করতে জীবনরক্ষাকারী ড্রোন তৈরি করেছে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে উদ্ধার অভিযান চালাতে মানববিহীন উড়োজাহাজের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি বন্যায় ভিয়েতনামের কু জুট জেলার স্রেপোক নদীর মাঝখানে আটকেপড়া এক ব্যক্তিকে ড্রোনের সাহায্যে আকাশপথে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়। বন্যায় পানির স্রোত ও কঠিন ভূখণ্ডের কারণে প্রচলিত উদ্ধার পদ্ধতি যখন ব্যর্থ তখন কৃষিকাজে ব্যবহৃত একটি ড্রোনই ওই দুর্যোগকবলিত ব্যক্তির জীবনরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে।
১০০ কেজি ভার বহনে সক্ষম ওই ড্রোনটি একজন মানুষকে সহজে এমন স্থানে পৌঁছে দেয় যেখান থেকে উদ্ধারকারী দল নিরাপদে তাকে উদ্ধার করতে পারে। তাই তুর্কি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ ভার বহনে সক্ষম কার্গো ড্রোনগুলো এমনভাবে তৈরি করছে যাতে সেগুলো উদ্ধার অভিযানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সেই লক্ষ্যে তুরস্কের জাইরোন ডায়নামিকস, টিট্রা টেকনোলজি ও দাসালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ড্রোন তৈরি করছে, যেগুলো কঠিন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
জাইরোন ডায়নামিকসের জেডডি৩৬০ মানববিহীন কার্গো হলো পরবর্তী প্রজন্মের উচ্চ-বহনক্ষম ড্রোন, যা ৬০ কেজি ভারী কোনো বস্তু নিয়ে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম। আবার এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে এটি ১০০ কেজি ওজনের ভার বহন করতে পারে।
ড্রোনগুলোর আকার তুলনামূলকভাবে ছোট ও সমজাতীয় সিস্টেমের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ফলে যেকোনো যানবাহনে সহজে বহন করা যায় এবং দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব হয়।
টিট্রা টেকনোলজির ‘আলপিন’ তুরস্কের প্রথম মানববিহীন হেলিকপ্টার। এতে জ্বালানিসহ সর্বোচ্চ ২০০ কেজি পর্যন্ত ভার বহনের সক্ষমতা রয়েছে। অধিক বহনক্ষমতা ও দীর্ঘ সময় আকাশে থাকার ক্ষমতা আলপিনকে পাহাড়ি এলাকা, বন্যা ও অগ্নিকাণ্ডের মতো পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কার্যকর করে তোলে।
অন্যদিকে, দাসাল বিভিন্ন ধরনের মানববিহীন কার্গো তৈরি করছে, যার মধ্যে পিইউএইচইউ সি৭৫ অন্যতম। এটি ৭৫ কেজি পর্যন্ত ভার বহনে সক্ষম। আগের মডেল থেকে উন্নত এই সংস্করণে বাড়তি ভার বহন ক্ষমতা যোগ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী এটিকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।
পিইউএইচইউ সি১০০ মানববিহীন কার্গো মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করেছিল দাসাল। এতে ১০০ কেজি ভার বহন ক্ষমতা, দীর্ঘ পাল্লা ও উচ্চ আনুভূমিক গতি রয়েছে।
দাসাল কোনডোর-সি১৫০ নামে আরো একটি ড্রোন তৈরি করেছে, যা ১৫০ কেজি ভার বহন করে টানা ৩০ মিনিট উড়তে সক্ষম।
তুর্কি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই উচ্চ-বহনক্ষম, স্বয়ংক্রিয় ও আঘাত-প্রতিরোধী ড্রোন ও মানববিহীন কার্গো শুধু প্রতিরক্ষা খাতেই নয়, বন্যা, ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগকালে উদ্ধার ও মানবিক সহায়তাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দ্রুত ও কার্যকর উদ্ধার অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এসব সিস্টেম জীবনের ঝুঁকি কমাতে এবং দুর্যোগের পরিবেশগত ও উপকরণগত ক্ষতি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদে রাখে।
সূত্র : আনাদোলু অ্যাজেন্সি



