ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিতে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম, কে এটি পরিচালনা করবে

সাবেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জেভিয়ার আবু ঈদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন এখনকার চেয়ে কখনো এত শক্তিশালী ছিল না। বিশ্ব ফিলিস্তিনের জন্য একত্রিত হয়েছে।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে দুই কিশোর
ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে দুই কিশোর |সংগৃহীত

চলতি মাসের শুরুতে হুসাম জোমলট নামের এক ফিলিস্তিনি কূটনীতিককে লন্ডনের চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কে একটি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেলজিয়াম সবেমাত্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের সাথে যোগ দিয়েছে। ড. জোমলটের স্পষ্টতই ধারণা ছিল যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে যাচ্ছে।

তিনি সতর্ক করেছিলেন, ‘নিউইয়র্কে আপনি যা দেখতে পাবেন তা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে সত্যিকারের শেষ প্রচেষ্টা হতে পারে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়।’

কয়েক সপ্তাহ পর এখন তা ঘটতে চলেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া- যারা ঐতিহ্যগতভাবেই ইসরাইলের শক্তিশালী মিত্র, অবশেষে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

স্যার কিয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের ঘোষণা দেন।

এতে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার মুখে, আমরা শান্তির সম্ভাবনা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করছি। এর অর্থ হলো একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরাইল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র- এই মুহূর্তে আমাদের কোনোটিই নেই।’

১৫০টিরও বেশি দেশ ইতোপূর্বেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তবে এই তালিকায় যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের যোগ হওয়াকে অনেকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখছেন।

সাবেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জেভিয়ার আবু ঈদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন এখনকার চেয়ে কখনো এত শক্তিশালী ছিল না। বিশ্ব ফিলিস্তিনের জন্য একত্রিত হয়েছে।’

রাষ্ট্রের মর্যাদার জন্য ১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিন ন্যায্যভাবে দু’টি দাবি করতে পারে- স্থায়ী জনসংখ্যা (যদিও গাজার যুদ্ধ এটিকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ফেলেছে) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা- ড. জোমলট যার প্রমাণ।

ফিলিস্তিনিদের জন্য তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত- পূর্ব জেরুসালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ১৯৬৭ সালে সিক্স ডে ওয়ার বা ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরাইল সেই সবগুলোই দখল করে নিয়েছিল।

১৯৪৮ সালে ইসরাইলের স্বাধীনতা দাবির পর থেকে, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ভৌগোলিকভাবে তিন-চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে ইসরাইল দ্বারা ঘিরে রয়েছে।

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের উপস্থিতির অর্থ হচ্ছে ১৯৯০-এর দশকের অসলো চুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মাত্র ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড পরিচালনা করে। ১৯৬৭ সাল থেকে বসতি সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে গ্রাস করেছে, যা ক্রমবর্ধমানভাবে খণ্ডিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে পূর্ব জেরুসালেম, যেটিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের রাজধানী বলে মনে করে, ইহুদি বসতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, যা ধীরে ধীরে পশ্চিম তীর থেকে শহরটিকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

গাজাকে আরো দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যখন ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার ফলে প্রায় দু’বছরের যুদ্ধের পর সেখানকার বেশিভাগ ভূখণ্ডই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

কিন্তু এসবকিছুই যেন পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ মন্টেভিডিও কনভেনশনের চতুর্থ মানদণ্ড অনুযায়ী রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন একটি কার্যকর সরকার। এবং এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

‘আমাদের একটি নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন’
ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে হওয়া একটি চুক্তির ফলে প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি (যা কেবল প্যালেস্টাইন অথরিটি বা পিএ নামে পরিচিত) তৈরি হয়, যেটি গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের উপর আংশিক নিয়ন্ত্রণ রাখে।

কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস ও পিএলওর প্রধান উপদল ফাতাহর মধ্যে সংঘাতের পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দ্বারা শাসিত হচ্ছে। গাজায় হামাস এবং পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যার নেতৃত্বে আছেন মাহমুদ আব্বাস।

এটা ৭৭ বছরের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং ১৮ বছরের রাজনৈতিক বিভাজন, যা পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময়।

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচন হয়েছিল ২০০৬ সালে, যার অর্থ ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনো ফিলিস্তিনি কখনো পশ্চিম তীর বা গাজায় ভোট দেয়নি।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী ডায়ানা বাট্টু বলেন, ‘এই সময়কালে আমাদের নির্বাচন না হওয়াটা মনকে খুব বিচলিত করে তোলে। আমাদের নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন।’

গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর, সমস্যাটি আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। লাখ লাখ নাগরিক মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পর, পশ্চিম তীরে অবস্থিত সদর দফতর থেকে আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মূলত অসহায় দর্শকের ভূমিকায় নেমে এসেছে।

অভ্যন্তরীণ বিরোধ
নেতৃত্বের স্তরের মধ্যে বিরোধ, উত্তেজনা বহু বছর আগে থেকে। বহু বছরের নির্বাসন থেকে পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত যখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দিতে ফিরে আসেন, তখন স্থানীয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদরা অনেকেই সেই প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান খুঁজে পাননি।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নবগঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ধীরে ধীরে উপনিবেশ স্থাপন বন্ধ করতে বা ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইজহাক রবিনের সাথে আরাফাতের ঐতিহাসিক করমর্দনের মাধ্যমে উত্থিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে অক্ষম বলে মনে হয়েছিল।

পরবর্তী বছরগুলো মসৃণ রাজনৈতিক বিবর্তনের জন্য সহায়ক ছিল না, এর কারণ ব্যর্থ শান্তি উদ্যোগ, ইহুদি বসতির অব্যাহত সম্প্রসারণ, ইসরাইলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ২০০৭ সালে হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সহিংসতার প্রভাব।

ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ ইয়েজিদ সায়িগ বলেন, ‘ঘটনার স্বাভাবিক ধারায় নতুন ব্যক্তিত্ব, নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব হতো। কিন্তু তা অসম্ভব ছিল... অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা বিভক্ত এবং এর ফলে নতুন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব এবং একত্রিত হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

তবে একজন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছিল, মারওয়ান বারঘৌতি। পশ্চিম তীরে জন্মগ্রহণ করে সেখানেই বেড়ে ওঠা মারওয়ান বারঘৌতি ১৫ বছর বয়সে আরাফাতের নেতৃত্বাধীন পিএলও উপদল ফাতাহতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

গ্রেফতার হওয়ার আগে এবং পাঁচজন ইসরাইলি নিহত হওয়ার ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার আগে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় বারঘৌতি একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। অবশ্য তিনি বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, ২০০২ সাল থেকে ইসরাইলি কারাগারে রয়েছেন বারঘৌতি।

তবুও যখন ফিলিস্তিনিরা সম্ভাব্য ভবিষ্যত নেতাদের নিয়ে কথা বলেন, তখন তারা এমন একজন ব্যক্তির কথাই বলেন, যিনি প্রায় এক-চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে বন্দী আছেন।

পশ্চিম তীর-ভিত্তিক প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারঘৌতিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেবেন, বারঘৌতি এক্ষেত্রে ২০০৫ সাল থেকে এই পদে থাকা আব্বাসের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন।

হামাসের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকা ফাতাহর একজন সিনিয়র সদস্য হওয়া সত্ত্বেও গাজায় বন্দী ইসরাইলি পণবন্দীদের বিনিময়ে হামাস যেসব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি চায়, তার তালিকায় বারঘৌতির নাম স্থান পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু ইসরাইল তাকে মুক্তি দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় ৬৬ বছর বয়সী এক দুর্বল, স্থূলকায় বারঘৌতিকে ইসরাইলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির কটূক্তি করছেন। বহু বছর পর বারঘৌতিকে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে দেখা গেছে।

নেতানিয়াহু এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র
গাজা যুদ্ধের আগেও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতা ছিল স্পষ্ট। তিনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘সবাই জানে যে আমিই সেই ব্যক্তি যিনি কয়েক দশক ধরে এমন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দিয়ে এসেছি যা আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে।’

গাজার উপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, গাজার ভবিষ্যত শাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তিনি যুক্তি দেন, আব্বাস ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার নিন্দা করেননি।

আগস্টে ইসরাইল একটি বসতি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় যা পূর্ব জেরুসালেমকে পশ্চিম তীর থেকে কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন করবে।

তিন হাজার ৪০০টি বাড়ির পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছিল, ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছিলেন যে এই পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে সমাহিত করবে, ‘কারণ স্বীকৃতি দেয়ার মতো কিছুই নেই এবং স্বীকৃতি দেয়ার মতো কেউ নেই।’

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের আয়োজন অনুযায়ী জুলাই মাসে তিন দিনের সম্মেলনের শেষে এক ঘোষণাপত্রে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘হামাসকে গাজায় তাদের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।’

‘নিউইয়র্ক ঘোষণাপত্র’ সমস্ত আরব রাষ্ট্র দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ১৪২ জন সদস্য এটি গ্রহণ করেছিলেন।

হামাস তাদের পক্ষ থেকে বলেছে, তারা গাজার কর্তৃত্ব টেকনোক্র্যাটদের একটি স্বাধীন প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

স্বীকৃতির প্রতীকীকরণ কি যথেষ্ট?
বারঘৌতির কারাগারে থাকা, আব্বাসের বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি হওয়া এবং পশ্চিম তীর টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া- এসবে এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব এবং সংহতির অভাব রয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্থহীন।

ডায়ানা বাট্টু বলেন, ‘এটি আসলে খুবই মূল্যবান হতে পারে।’ যদিও তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি নির্ভর করে কেন এই দেশগুলো এটি করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী তার উপর।’

একজন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন, স্বীকৃতির প্রতীকীকরণ যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এমন কিছুর দিকে অগ্রগতি অর্জন করতে পারি যাতে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ কেবল একটি স্বীকৃতি দেয়া পক্ষে পরিণত না হয়।’

নিউইয়র্ক ঘোষণাপত্রে ব্রিটেনসহ স্বাক্ষরকারীদের ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য বাস্তব, নির্দিষ্ট সময় সীমাবদ্ধ এবং অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ’ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

লন্ডনের কর্মকর্তারা ঘোষণাপত্রে গাজা ও পশ্চিম তীর একীভূতকরণ, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং ফিলিস্তিনি নির্বাচনের প্রতি সমর্থন (পাশাপাশি গাজার জন্য আরব পুনর্গঠন পরিকল্পনা) উল্লেখ করার দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা স্বীকৃতি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু তারা জানেন যে এক্ষেত্রে বাধাগুলো ভয়াবহ।

ইসরাইল দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে আসছে এবং পশ্চিম তীরের কিছু অংশ বা পুরো অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকিও দিয়েছে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে তার অসন্তোষ স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার মতবিরোধ রয়েছে।’

আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিলের অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নেয়, যা জাতিসঙ্ঘের নিজস্ব নিয়মের লঙ্ঘন।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো রয়েছে এবং ট্রাম্প এখনো তার তথাকথিত ‘রিভেরা পরিকল্পনা’-এর একটি সংস্করণের সাথেই আটকে আছেন বলে মনে হচ্ছে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার উপর ‘দীর্ঘমেয়াদি মালিকানার অবস্থান’ গ্রহণ করবে।

গুরুত্বপূর্ণভাবেই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি, কেবল ‘সংস্কারিত ফিলিস্তিনি স্ব-শাসন’ বা গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে ভবিষ্যতের কোনো সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যত হয়তো নিউইয়র্ক ঘোষণা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং আরব পুনর্গঠন পরিকল্পনার মধ্যেই কোথাও থাকতে পারে।

সমস্ত পরিকল্পনাই নিজস্ব উপায়ে, গত দু’বছরে গাজার উপর নেমে আসা বিপর্যয় থেকে কিছু অর্জনের আশা করছে। এখান থেকে যেটাই উদ্ভূত হোক না কেন, ফিলিস্তিন এবং এর নেতৃত্বের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

কিন্তু ডায়ানা বাট্টুর মতে ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি আসলে যা চান, তা হচ্ছে এই দেশগুলো আরো বেশি হত্যাকাণ্ড হওয়া রোধ করুক।
সূত্র : বিবিসি