গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ায় গোটা বিশ্ববাসী আশা করেছিল একটি ফজরের; যেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সূর্য উদিত হবে। এমন আশাবাদ ফুটে ওঠেছে মিসরের শার্ম শায়েখ সম্মেলনে দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে। অন্য বিশ্ব নেতারাও যুদ্ধ বন্ধ চুক্তিতে স্বাক্ষরের সময় এমন আশার বাণী শুনিয়েছেন।
কিন্তু ইসরাইলের অতি উগ্রবাদী সরকারের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এমন আশাবাদ দেখা যায় না। কারণ, তারা সবসময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট সমাধান না করে তা থেকে পালানোর চেষ্টা করে এবং একে উপত্যকার কৌশলগত পরিবেশকে পরিবর্তনের সুযোগ মনে করে।
তবে তারা গাজায় বড় ধরনের কূটনৈতিক ব্যর্থতার শিকার হয়েছে। কারণ, দুই বছর যুদ্ধ করেছে; কিন্তু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা ভূ-রাজনৈতিক কোনোদিক থেকেই তারা লাভবান হতে পারেনি। উল্টো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তাদের গুরুত্বে বিরাট ধস নেমেছে। গাজায় তারা যে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালিয়েছে, তা কোনোদিনই এসব ক্ষয়-ক্ষতির মূল্য পরিশোধ করতে পারবে না।
এই পরিস্থিতি আরো ঘনীভূত হবে ইসরাইলি কট্টরপন্থী দলগুলোর অতি উৎসাহের কারণে; যারা সরকারকে নতুন কোনো ক্ষেত্র অনুসন্ধানে প্ররোচিত করে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পূর্ণ শক্তি নিয়োগের কথা বলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের সেই মনোবাঞ্ছা পূরনের জন্য এবার সিরিয়াকেই টার্গেট করতে পারে।
সিরিয়াকেই কেন টার্গেট করবে?
বিশেষ কিছু কারণে তারা সিরিয়াকে টার্গেট করতে পারে। যেমন ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পরিবর্তন করে দিতে চায়। দেশটির কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের বিবৃতি থেকে বুঝা গেছে যে তাদের পরিকল্পনা হলো, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে পরস্পর থেকে আলাদা করে দেবে। এরপর প্রতিটি দেশে গোত্রভিত্তিক ছোট ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে।
তারা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সিরিয়া থেকেই শুরু করতে চায়। এদের সাথে ইরাক ও তুরস্কের সামাজিক ও ভৌগলিক সম্পর্ক রয়েছে। একইসাথে সেখানে গোত্রভিত্তিক বিভাজনও রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে পরিবর্তন ঘটাতে পারলে দ্রুতই তা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আর মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোর সাথে যেহেতু সিরিয়ার সংযোগ রয়েছে, তাই এখান থেকে কাজ শুরু করাই হবে যথাপোযুক্ত।
সিরিয়াকে নিয়ে ইসরাইলের অনেকগুলো পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন ডেভিডস করিডোর, সুইদা গভর্নরেটের জন্য মানবিক করিডোর এবং দক্ষিণে বাফার জোন প্রতিষ্ঠা। ইসরাইল হয়তো বাস্তবেই এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। যেমন তারা সিরিয়ার দক্ষিণে বাফার জোন পরিকল্পনায় মনোযোগ দিয়েছে। সেজন্য সামরিক বাজেটও বরাদ্দ দিয়েছে। অথবা তারা এখনো মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় আছে। যেমনটি বৃহত্তর ইসরাইল ও ডেভিডস করিডোর নিয়ে তাদের পলিসি।
সূত্র : আল জাজিরা



