ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির মাঝেই গাজা ও খান ইউনিসে হামলা করে ৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এই হামলায় আরো কয়েকজন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল মাআমদানি হাসপাতালের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী শুজাইয়া এলাকায় কোয়াড কপ্টার ড্রোন থেকে গুলি বর্ষণ করে অন্তত ৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ সময় ওই ফিলিস্তিনিরা সেখানে তাদের বাড়ির চিহ্ন তালাশ করছিলেন।
এই হামলার বিষয়ে ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে যে তারা সন্দেহভাজন কিছু লোককে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালিয়েছে। তাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করা হয়েছিল যে তারা উপত্যকার হলুদ রেখা অতিক্রমের চেষ্টা করছে।
তারা আরো দাবি করেছে, এই লোকজন ফাঁকা গুলি ছাড়ার পরও সেনাদের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। সেজন্য তাদের উপর হামলা করা হয়েছে।
এ সময় তারা নির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানায়।
এদিকে, উত্তর গাজার অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সূত্র জানিয়েছে যে জাবালিয়া এলাকার হালাওয়া অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অপরদিকে, দক্ষিণ গাজার কয়েকটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় ফাখারি শহরে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়; এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হয়। এছাড়া নাসের হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, খান ইউনিসে ইসরাইলি হামলায় দু’জন আহত হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছে, মিসর সীমান্ত ঘেঁষা রাফার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় ইসরাইলি ট্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কয়েকটি সূত্রও জানিয়েছে, রাফার উত্তরাঞ্চলীয় শাকুশ এলাকায় ইসরাইলি ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। প্রথম ধাপে ইসরাইলি বাহিনী গাজা থেকে হলুদ রেখা পর্যন্ত সরিয়ে নেয়া হবে। তবে তারা গাজার কিছু অংশে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে।
গাজায় ইসরাইলি হামলার বিষয়ে হামাসের মুখপাত্র হাজিম কাসেম বলেন, ইসরাইলি হামলায় গাজাবাসীর মৃত্যু যুদ্ধ বন্ধ চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ সময় তিনি মধ্যস্থতাকারী পক্ষকে ইসরাইলি তৎপরতা লক্ষ্য করা এবং তাদেরকে চুক্তি থেকে সরে না যেতে বাধ্য করার আহ্বান জানান।
গাজার বেসামরিক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোহাম্মাদ বাসাল বলেন, যুদ্ধ বন্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫০টির বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসব লাশের কিছু কিছু রাস্তঘাটেই ছড়ানো ছিল।
এই মুখপাত্র বলেন, ধারণা করা হচ্ছে যে এখনো ১০ সহস্রাধিক লাশ ধ্বংসস্তুপের নিচে রয়ে গেছে। কিন্তু বেসামরিক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, এ ধ্বংসস্তুপ সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভারি সরঞ্জামের তীব্র ঘাটতি অনুভব করছেন তারা।
সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন জায়গায় এখনো বিস্ফোরক দ্রব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে নাগরিকদের জীবনের বড় ধরনের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
জাতিসঙ্ঘের অনুমান অনুসারে গাজায় অন্তত ৫৫ মিলিয়ন টন ওজনের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রতিবেদনে অনুসারে এ পর্যন্ত এই যুদ্ধে অন্তত ৬৭ হাজার ৮৬৯ জনের নিহত হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া আরো ১ লাখ ৭০ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা