যুদ্ধের মূল্য বুঝছে ইহুদিরা

ধ্বংসস্তূপ আর আতঙ্কে কাঁপছে ইসরাইল, চাপে নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহু হঠাৎ করেই নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষাণলে পড়তে হয় তাকে। এতে যুদ্ধ পরিচালনার উপর থেকে তার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে যায়।

সৈয়দ মূসা রেজা

মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক সংঘর্ষ আর যুদ্ধের পেছনে যারা দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়—তাদেরই একজন বর্তমান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু এবার ইরানের পাল্টা ‘চূর্ণকারী’ হামলার পর বদলে গেছে চিত্র। হারেৎজ নামের হিব্রু ভাষার প্রভাবশালী খবরের কাগজ একে বলেছে “ইসরায়েলি মনস্তত্ত্বে যুদ্ধ-পরবর্তী ধাক্কা” হিসেবে। তারা এই বিষয়ে দু’টি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে—একটিতে সাধারণ ইসরাইলিদের যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক অবস্থা, আর অপরটিতে যুদ্ধবিরতির পর নেতানিয়াহুর ওপর সম্ভাব্য চাপ এবং ইরান-আমেরিকা পরমাণু আলোচনার সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।

এদিকে ইসরাইলি প্রভাবাধীন পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইজরাইল কেন ইসরাইল এই যুদ্ধ থেকে পিছু হটলো তার উপর আলাদা করে নজর দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেতানিয়াহু হঠাৎ করেই নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষাণলে পড়তে হয় তাকে। এতে যুদ্ধ পরিচালনার উপর থেকে তার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে যায়।

অন্যদিকে হিব্রু ওয়েবসাইট প্লাস ৯৭২ (+৯৭২)-এর প্রতিবেদনে সরাসরি বলেছে, “ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় এখন প্রতিটি ইসরাইলির মনে গেঁথে গেছে।” এমনকি যদি যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলেও ইসরাইলিরা নিজেদের আর নিরাপদ মনে করবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে তা থেকে এই চাপের মাত্রা যে কত গভীর তা বোঝা যায়।

হারেৎজ পত্রিকার আরেকটি মন্তব্যচিত্র বলছে—ইরানের পাল্টা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে ইসরায়েলিরা যেন গাজার চেহারা দেখে ফেলেছে। খবরটিতে বলা হয়েছে, “সময় হয়েছে একটু থেমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার। যারা এই যুদ্ধের খেসারত দিচ্ছে, সেই ইসরাইলিদের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধযন্ত্র থামানোর এখনই সময়।”

এমন বক্তব্য শুধু যুদ্ধের কৌশলগত বিশ্লেষণ নয়, বরং এক প্রকার আত্মসমালোচনাও। যেসব আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যকে বারবার জ্বলন্ত বালুভূমিতে পরিণত করেছে, সেসব অভিযানের ফলাফল কী ভয়াবহ হতে পারে—তা এবার নিজেরাই উপলব্ধি করছে ইসরায়েলি মিডিয়া।

নেতানিয়াহুর জন্য সামনে কোন পথ? এ বারে সে প্রশ্ন উঠছে। যুদ্ধবিরতির পর নেতানিয়াহুর সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ। একদিকে অভ্যন্তরীণ চাপ, যুদ্ধের ফলে জনমানসে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং রাজনৈতিক অনাস্থা; অন্যদিকে বাইরের চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা এবং সম্ভাব্য ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ নেতানিয়াহুর কৌশলগত দুর্বলতা এবং নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ‘নিরাপত্তা'র প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের মানুষ তাকে একজন বিভ্রান্ত নায়ক হিসেবেই দেখছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। তবে এই সাম্প্রতিক ইরান-ইসরেইল সংঘাত এবং তার পরবর্তী অভিঘাত এক নতুন মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর সেই ইঙ্গিতটি হলো, আগ্রাসনের যুগ হয়তো শেষের পথে। শাসকদের চোখে না হোক, অন্তত জনগণের চোখে যুদ্ধ আর বীরত্বের প্রতীক নয়—তা এখন মৃত্যুর আর নিরাপত্তাহীনতার নাম। এখন প্রয়োজন আলোচনার, সংযমের, আর মানবিকতা-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির।

সূত্র: তাসনিম নিউজ।