ইসরাইলি হামলায় প্রধানমন্ত্রী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করল হাউছিরা

হাউছিদের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাতের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই হামলায় আরো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাভি
আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাভি |সংগৃহীত

ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিশ্চিত করেছে, তাদের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব নাসের আল-রাহাভি ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তাদের আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে আইডিএফ জানিয়েছে, রাজধানী সানায় একটি বৈঠকে অংশ নেয়ার সময় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়ে রাহাভিসহ হাউছির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে হাউছি বিদ্রোহীরা উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সানা থেকে উৎখাত করলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-হাদাত জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে হাউছিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিচার, যুব ও ক্রীড়া, সামাজিক কল্যাণ এবং শ্রম মন্ত্রী রয়েছেন।

হাউছিদের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাতের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই হামলায় আরো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এতে আরো বলা হয়েছে, হাউছিদের উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ আহমেদ মিফতাহ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।

রাহাভি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এই পদে ছিলেন। তবে তাকে মূলত প্রতীকী প্রধান হিসেবে দেখা হতো। সামরিক অভিযান পরিকল্পনাসহ উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।

বৃহস্পতিবারের হামলায় হতাহতের মধ্যে হাউছি আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা আব্দুল-মালিক আল-হাউছি, সেইসাথে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কর্মী বাহিনীর প্রধানের নাম নেই বলে জানা গেছে।

শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, ওই বৈঠকের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা হামলা চালায়। তবে এখনো পুরো অভিযানের প্রভাব মূল্যায়ন চলছে বলে জানিয়েছে তারা।

গাজায় ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই হাউছিরা নিয়মিত ইসরাইলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজকে টার্গেট করে আসছে। তারা জানিয়েছে, এটি ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশের অংশ। জবাবে ইসরাইলও হাউছি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালাচ্ছে। যার উদ্দেশ্য হাউছিদের হামলা সীমিত করা।

হাউছি বিদ্রোহী কারা?

ইয়েমেনের সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম জায়েদিদের পক্ষে কথা বলা সশস্ত্র রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী হাউছি। তাদের দাবি, ইরান-নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ অক্ষের অংশ তারা। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তর পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এই অক্ষে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরো সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আনসারুল্লাহ নামে পরিচিত। যার অর্থ আল্লাহর পক্ষে। নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেয়া গোষ্ঠীটির নাম এসেছে তাদের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন আল-হাউছির নাম থেকে। তার ভাই আবদুল মালিক আল-হাউছি তাদের বর্তমান নেতা।

২০০০ সালের শুরুর দিকে হাউছিরা ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে একের পর এক বিদ্রোহ করে। তারা দেশের উত্তরাঞ্চলে নিজেদের এলাকায় সালেহর কর্তৃত্ববাদী শাসনের বাইরে আরো স্বায়ত্তশাসন চাইছিল। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় হওয়া গণবিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট সালেহকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে। সে সময় তার ডেপুটি আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

হাদির শাসনকালে হাউছিরা ক্ষমতাচ্যুত সালেহ ও তার অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে জোট গঠন করে এবং উত্তরাঞ্চলের শাদা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজধানী সানা দখল করে। ২০১৫ সালে বিদ্রোহীরা পশ্চিম ইয়েমেনের বড় একটি অংশ দখল করে এবং প্রেসিডেন্টকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে।

প্রতিবেশী সৌদি আরবের শঙ্কা ছিল, হাউছিরা পুরো ইয়েমেন দখল করে একে ইরানের প্রভাবাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এ কারণে আরব দেশগুলোর একটি জোট গঠন করে সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু বহু বছরের বিমান হামলা ও স্থলযুদ্ধ সত্ত্বেও অধিকৃত অধিকাংশ এলাকা থেকে হাউছিদের সরানো যায়নি। বর্তমানে সৌদি আরব হাউছিদের সাথে একটি শান্তি চুক্তির চেষ্টা করছে। আর ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ।

সূত্র : বিবিসি