ইসরাইলের সেনাবাহিনী বারবার লেবাননে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের বাহিনী আবারো লেবাননের সার্বভৌমত্ব এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং বৈরুতসহ বিভিন্ন এলাকায় গুলি বর্ষণ ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের ভূখণ্ডের ‘ওডিসেহ’ এবং ‘কাফর কালা’ দুই শহরের মধ্যবর্তী ‘মসকাফ আম’ অঞ্চলে অবস্থানরত সৈন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
লেবাননের সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটির সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে গত মাস (নভেম্বর) পর্যন্ত ইসরাইলের আক্রমণে ৩৩৫ জন নিহত এবং ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান দেশের দক্ষিণে বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির প্রমাণ।
এই আক্রমণগুলোর পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে প্রায় প্রতিদিনই ধ্বংসযজ্ঞ, বোমা হামলা এবং বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্টে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং দৈনন্দিন জীবনকে অচল করে দিয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক এ আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে যে এই সঙ্ঘাত বহুমুখী আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।
লেবাননের প্রতিরোধকে দুর্বল করার অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং দক্ষিণ লেবাননে বৃহত্তর সামরিক উপস্থিতির পথ প্রশস্ত করার জন্য ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, যার লক্ষ্য হিজবুল্লাহকে দুর্বল করা এবং এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করা। প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ইসরাইলের সেনাবাহিনী এমনকি লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক ঘাঁটি তৈরি শুরু করেছে।
ইসরাইলের নেতারা সামরিক ও রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা এখনো তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে ইসরাইল লেবাননের উপর নতুন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু বাস্তবে তারা প্রতিরোধকে দুর্বল করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে রাজনৈতিক সমর্থন এবং তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নীরবতা বজায় রেখে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পথ প্রশস্ত করেছে; অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করে দিয়েছে যে এই চলমান থাকলে এই অঞ্চলকে আরো ব্যাপক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইসরাইল লেবাননে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে প্রতিরোধের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু ইহুদি-মার্কিন এই যৌথ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এই আগ্রাসনের প্রতি মার্কিন সমর্থন তাদের ধারাবাহিক আগ্রাসনের ভিত্তি তৈরি করেছে। কিন্তু এটি প্রতিরোধের অবস্থানকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়নি।
বিপরীতে জনপ্রিয়তা, সামরিক শক্তি এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে লেবাননের প্রতিরোধ শক্তি ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে এখনো টিকে আছে। এ থেকে বোঝা যায় ইসরাইল যত বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে থাকবে, লেবাননের প্রতিরোধের বৈধতা এবং সংহতি তত বেশি শক্তিশালী হবে।
সূত্র : পার্সটুডে



