সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সম্প্রতি ইসরাইলি বিমান হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। নিউজউইক পত্রিকা একে সিরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারার শাসনামলের প্রথম সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সঙ্কট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে সুয়েইদা অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নতুন ঢেউ এবং ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে। নিউজউইক ইঙ্গিত দিয়েছে যে যদিও শারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছুটা সমর্থন পেয়েছেন, তবুও তিনি শিগগিরই ইসরাইলের সম্ভাব্য আঘাতের তালিকায় স্থান পেতে পারেন।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমান হামলার মাত্রা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে দখলকৃত নতুন এলাকাগুলোতে তা আরো তীব্র হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধংদেহী বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে শারার শান্তি বজায় রাখার আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইল তাকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখছে বলে পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে।
ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্রদূত রেজা মনসুর নিউজউইক-কে বলেন, ‘যদি ইসরাইল মনে করে যে কোনো নেতা তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে, তাহলে তারা পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।’ তিনি হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, ইরানি সামরিক কমান্ডার এবং হামাস নেতাদের উদাহরণ টেনে বলেন, গত দুই বছরে এ ধরণের ঘটনা বহুবার ঘটেছে।
দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলা পরিস্থিতিকে আরো বিস্ফোরক করে তুলেছে। মনসুর এবং ইসরাইলের দ্রুজ নেতারা সিরিয়ায় ইসরাইলি সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীসমর্থিত বেদুইন উপজাতিদের হামলায় শত শত দ্রুজ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এ প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ‘বাফার জোন’ স্থাপনের কথা বলেছেন, যা গোলান হাইটস পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এবং সুয়েইদা অঞ্চলও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মনসুর বলেন, যদি শারা দ্রুজদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হন, তবে দক্ষিণ সিরিয়ায় কার্যত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে, যেমনটা কুর্দিরা উত্তর-পূর্বে করেছে।
মার্কিন কূটনীতিক সাওসান নাটুর হাসন নিউজউইক-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘সিরিয়ার দ্রুজরা আরব অঞ্চলের মধ্যে বহুত্ববাদ এবং সংখ্যালঘু বৈচিত্র্যের শেষ প্রতীক। ইসরাইল তাদের রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অন্যদিকে, শারা অভিযোগ করেছেন যে ইসরাইল সিরিয়াকে ‘যুদ্ধ ও বিভক্তির দিকে টেনে আনার চেষ্টা করছে’ এবং দ্রুজদের সুরক্ষা তার সরকারের ‘অগ্রাধিকার’।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে, অন্যদিকে কুর্দিদের সাথে সমঝোতা এবং সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার ব্যাপারেও সক্রিয় রয়েছে। এরদোগান এই অবস্থানকে সমর্থন করে বলেন, ‘সিরিয়াকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা কখনোই সফল হবে না।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে আহমেদ আল-শারার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত রয়ে গেছে। তিনি একদিকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সামরিক আগ্রাসন ও আঞ্চলিক জোটের চাপে রয়েছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ধারণ করবে আসন্ন সপ্তাহগুলোর কূটনৈতিক ও সামরিক গতিপথ।
সূত্র : নিউজউইক