হাদিসে বর্ণিত টাইবেরিয়াস হ্রদের পানি অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, তবে কি আমরা কিয়ামতের বড় আলামতের যুগে প্রবেশ করছি?
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্রদটির পানি অনেকাংশেই কমে গেছে। দ্রুতই হ্রদটি পরিপূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে এর অগভীর অংশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিচ্ছেন।
ইসরাইলি গণমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্রদের পানির স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এতে পানির গুণগত মানের অবনতি ঘটতে পারে। ফলে কৃষিকাজ ও পানীয় কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত অংশ সংকুচিত হতে পারে।
টাইবেরিয়াস হ্রদ
টাইবেরিয়াস হ্রদ উত্তর ফিলিস্তিনের গ্যালিলি অঞ্চল ও জর্ডান নদীর উত্তরে ইসরাইল অধিকৃত সিরিয়ান গোলান হাইটসের মধ্যে অবস্থিত একটি মিঠা পানির হ্রদ। হ্রদের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৩ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৬ মিটার। মোট আয়তন ১৬৬ বর্গকিলোমিটার।
কিয়ামতের আলামত
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া শুধু পরিবেশগত উদ্বেগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং অনেকেই একে ধর্মীয় ইস্যুর সাথে জড়িয়ে দিয়েছেন। তারা হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইবেরিয়াস হ্রদের শুকিয়ে যাওয়াকে খ্রিষ্টবিরোধী (দাজ্জাল) ও ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাবের পূর্বাভাস হিসেবে উল্লেখ করছেন।
একজন অ্যাক্টিভিস্ট লিখেছেন, ‘পৃথিবী প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় কোনো ঘটনার জন্য... টাইবেরিয়াস হ্রদ আগের চেয়ে আরো অনেক শুকিয়ে যাচ্ছে! ঠিক এই মুহূর্তে বিশ্ব একটি অদ্ভুত ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে, যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে এটি কি কাকতালীয় না আমরা কিয়ামতের বড় আলামতের যুগে প্রবেশ করছি?’
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘কেয়ামতের একটি লক্ষণ হলো টাইবেরিয়াস হ্রদ শুকিয়ে যাবে... এবং ইতোমধ্যে তা সতর্কতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কেউ কি মনোযোগ দেবে?’
তৃতীয়জন লিখেছেন, ‘টাইবেরিয়াস হ্রদের ব্যাপকভাবে শুকিয়ে যাওয়া দাজ্জালের আবির্ভাবের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
টাইবেরিয়াস হ্রদের শুকিয়ে যাওয়া সম্পর্কে হাদিস কী বলে?
হাদিসে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, মাহদীর যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরে ইয়াজুজ ও মাজুজ এই হ্রদের পানি পান করবে। ফলে হ্রদটি শুকিয়ে যাবে।
বিশিষ্ট সাহাবী নাওয়াস ইবনে সামআন বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যখন এই অবস্থা সৃষ্টি হবে, তখন আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা আ:-এর কাছে ওহী পাঠাবেন যে ‘আমি এমন কিছু বান্দাদের পাঠাচ্ছি, যাদের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা কারো নেই। তাই তোমরা সিনাই পর্বতে আশ্রয় নাও।’ তখন আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে পাঠাবেন। তারা দলবদ্ধভাবে চারদিক থেকে আসবে। তাদের প্রথম ব্যক্তি টাইবেরিয়াস হ্রদের পানি পান করবে। আর শেষজন এসে বলবে, ‘এখানে এক সময় পানি ছিল।’ (সহীহ মুসলিম)
উল্লেখ্য যে হজরত ঈসা আ. যখন দাজ্জালকে হত্যা করবেন, তখন ইয়াজুজ মাজুজ পৃথিবীতে আসবে।
ইমাম ইবনে আবিল-ইজ্জ আল-হানাফি রহ. বলেন, ‘ইয়াজুজ ও মাজুজ ঈসা আ:-এর সময় আবির্ভূত হবে, যখন তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তাঁর দোয়ার বরকতে এক রাতেই আল্লাহ ওদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবেন।’
কিয়ামতের আগের সময় যা ঘটবে
বিশিষ্ট সাহাবী হজরত তামিমে দারী রা. এর দাজ্জাল বিষয়ক বিখ্যাত হাদিসে এও এসেছে যে নবীজি সা. বলেছেন, দাজ্জাল গালীল সাগর (টাইবেরিয়াস হ্রদ) সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল যে এতে কি পানি আছে? তারা উত্তরে হাঁ বললেন। তখন সে বলে ওঠে, কিন্তু এর পানি অচিরেই শুকিয়ে যাবে।’
কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে, ইয়াজুজ ও মাজুজ হ্রদের পাশে দিয়ে যাবে। তাদের প্রথম ব্যক্তি তা থেকে পানি পান করবে। আর শেষজন কিছুই পাবে না।
ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইট ‘আল ইসলাম সুয়াল ওয়া জওয়াব’-এ বলা হয়েছে, টাইবেরিয়াস হ্রদের শুকিয়ে যাওয়া মাহদীর আগমনের পূর্বলক্ষণ নয়। বরং এটি মাহদীর সময় শেষ হওয়ার পর ঘটবে। তখন ইয়াজুজ ও মাজুজের আবির্ভাব ঘটবে।
শরিয়া বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেন, সমসাময়িক ঘটনাগুলোর সাথে ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে জোর করে মিলাতে যাওয়া ঠিক নয়। বরং এসব বিষয় সতর্কভাবে ও ধৈর্যের সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত।
সূত্র : আল জাজিরা মুবাশির