ইরানে পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব নয় : সাবেক মার্কিন কূটনীতিক

আমরা যদি ইরানের বর্তমান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলাও করি, তবুও তারা গোপনে এবং ভূগর্ভে তাদের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে। এক বছর বা তিন বছর পর তারা আবার একই পথে ফিরে যাবে।

সৈয়দ মূসা রেজা
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা |সংগৃহীত

ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ২০১৫ সালের পরমাণু আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক ওয়েন্ডি শারম্যান।

জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং জার্মানিকে নিয়ে গঠিত ৫ যোগ এক গোষ্ঠীর জিসিপিও সাথে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই করা হয়েছিল।

ইরানের ছাত্রদের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ওয়েন্ডি শারম্যান বলেন, আমরা যদি ইরানের বর্তমান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলাও করি, তবুও তারা গোপনে এবং ভূগর্ভে তাদের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে। এক বছর বা তিন বছর পর তারা আবার একই পথে ফিরে যাবে।

শারম্যান আরো বলেন, ইরানের সব রাজনৈতিক ধারা রক্ষণশীল। তবে চরম রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো ওপর থেকে চাপ বাড়লে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে পারে। এতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমীদেশগুলো তাদের এমন এক পথে ঠেলে দেব, যেটা আসলে এ সব দেশের নিজস্ব স্বার্থের পরিপন্থী হবে।

এদিকে ইরানের শীর্ষ নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটির সামরিক বা রাজনৈতিক নীতিতে পরমাণু অস্ত্রের কোনো স্থান নেই। রাহবার নামে পরিচিত ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতার ফতোয়া অনুযায়ী, ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে পারে না।

তবে শারম্যান কূটনৈতিক পথের পক্ষেই কথা বলেছেন। তার ভাষায়, নতুন একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও পূর্বের জেসিপিওএ-এর চেয়েও সামান্য ভালো একটি চুক্তি করতে পারেন। কারণ, তার পেছনে কংগ্রেস এবং সিনেটের সমর্থন থাকবে। সত্যি বলতে, যুদ্ধের তুলনায় এটাই অনেক ভালো।

উল্লেখ্য, ওমানের মধ্যস্থতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত পরোক্ষভাবে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে। আলোচনার পরিবেশকে গঠনমূলক বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ওমান এই সর্বশেষ আলোচনার সময় কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে।

এদিকে, তৃতীয় দফার পর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির বা এনপিটির সদস্য হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের নেই। ইরান যদি পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে চায়, তবে অন্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারে।

অন্যদিকে, ইরানিরা জোর দিয়ে বলছে, শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান নিজ পরমাণু কর্মসূচিকে জোরালোভাবে রক্ষা করবে।

চীন : প্রধান কৌশলগত হুমকি

ইরানের বিষয় ছাড়াও ওয়েন্ডি শারম্যান এ সাক্ষাৎকারে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রধান কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ বলে উল্লেখ করেন।

তার মতে, চীন খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে, আমেরিকা ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সাথে কেমন আচরণ করছে। যদি রাশিয়া একটি স্বাধীন দেশ দখল করতে পারে, তাহলে চীনও ভাবতে পারে, তারা তাইওয়ান দখল করতে পারবে, সেই সঙ্গে সেখানকার উন্নত চিপ প্রযুক্তিও তাদের দখলে চলে আসবে।

শারম্যান বলেন, এটি ওয়াশিংটনের জন্য গুরুতর হুমকি। কারণ বেশিরভাগ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের চিপ তাইওয়ান থেকেই সংগ্রহ করে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করছি। ট্রাম্প, বাইডেন এমনকি ওবামা প্রশাসনও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেছে।

উল্লেখ্য, চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে এবং প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটি দখলের হুমকি দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে এবং অনেক মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাইওয়ানের তৈরি সেমিকন্ডাক্টরের ওপর নির্ভরশীল।