ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা এতদিন যা ধারণা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তার থেকেও অনেক বেশি হতে পারে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জেইট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী রস্টকের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।
গবেষণা প্রকল্পটির কো-লিডার ইরিনা চেন বলেন, ‘আমরা কখনই নিহতের সঠিক সংখ্যা জানতে পারব না। আমরা কেবল যথাসম্ভব সঠিকভাবে অনুমান করার চেষ্টা করছি যে বাস্তবসম্মত মাত্রা কী হতে পারে।‘
গবেষকদের গণনার ওপর ভিত্তি করে, যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে গাজা উপত্যকায় ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন নিহত হয়েছে। তাদের গড় অনুমান এক লাখ ১২ হাজার ৬৯ জন।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং একটি পরিসংখ্যানগত চিত্র তৈরি করেছেন। গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ছাড়াও তারা একটি স্বাধীন পারিবারিক জরিপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত নিহতের সংবাদও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এতদিন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যার একমাত্র সরকারি উৎস ছিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে তারা ৬৭ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। তবে জেইটের মতে, এতে পরিসংখ্যানগত কারসাজির কোনো প্রমাণ নেই।
এদিকে বিভিন্ন গবেষণা দল আগেই দেখিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে থাকে। এখন এটি ভালোভাবেই নথিভুক্ত হয়েছে যে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে সরকারি সংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ বাস্তবে নিহত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণাতেই অপ্রকাশিত নিহতের সংখ্যা যে বেশি, তা বারবার উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র নিশ্চিত মৃত্যুর তথ্যগুলোই গণনা করে। যেমন, হাসপাতাল থেকে যাদের মৃত্যু সনদ দেয়া হয়েছে। যেহেতু যুদ্ধের সময় অনেক হাসপাতালকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছিল, তাই মন্ত্রণালয় এখন আত্মীয়দের কাছ থেকে মৃত্যুসংবাদও গ্রহণ করে। এরপর একটি প্যানেল সেসব তথ্য যাচাই করে। তবে বোমায বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া নিহতদের প্রায়শই রেকর্ড করা হয় না।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তাদের গবেষণা পূর্ববর্তী ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে এবং বিস্তারিত মৃত্যুহারের অনুমান গণনা করেছে। তারা পুরুষ ও নারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের গোষ্ঠীকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে। গবেষকদের হিসাব অনুসারে, যুদ্ধে নিহতদের প্রায় ২৭ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং প্রায় ২৪ শতাংশ নারী।
সূত্র : আনাদোলু অ্যাজেন্সি



