গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এতে পূর্ণ সম্মতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইসরাইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সম্মতির কথা জানান তিনি।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার আগে কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সাথে। এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছে যে হামাস গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের সদস্যদেরকে পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, আমরা তাদের পুলিশ মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছি। তারা এই বাহিনী মোতায়েন করে সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। এই পরিস্থিতিতে যেন বড় ধরনের কোনো অপরাধ না ঘটে এবং নতুন করে যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা চাই, গাজার পরিস্থিতি শান্ত ও নিরাপদ থাকুক।
তিনি আরো বলেন, ‘গাজায় অন্তত ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সেখানে এমনও কিছু অঞ্চল রয়েছে, যা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ এ সময় হামাস ও ইসরাইলের মাঝে যুদ্ধ পরিপূর্ণভাবে থেমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। টুইট ব্যবহারকারীরা মনে করছেন যে এই বিবৃতির মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে শান্ত করবার চেষ্টা করছেন। কারণ, বিষয়টি অনেক জটিল ও কঠিন। তিনি এই মুহূর্তে এ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে যেতে চাচ্ছেন না। কারণ, তিনি এখনও নিশ্চিত নন যে পরবর্তী ধাপের অগ্রগতি হবে কিনা?
ব্লগাররা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই অনুমোদন প্রত্যাশিত। তিনি গাজা বিষয়ে উপদেষ্টার আসনে নিজেকে দেখতে চান এবং হামাসকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চান যেন তারা ট্রাম্পের সবুজ সঙ্কেতের ভিত্তিতেই ওই কাজটি করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গোটা বিশ্বই জানে যে মাতৃভূমির নিরাপত্তা ও পুনর্গঠনে ভূমিকার জন্য হামাস ট্রাম্পের সঙ্কেতের প্রয়োজন বোধ করে না।
অন্যরা বলছে, এটি তো একদম স্বাভাবিক ব্যাপার যে ইসরাইলি বাহিনী গাজা থেকে প্রত্যাহার হলে সেখানে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য হামাসই ভূমিকা রাখবে। কারণ, এখন তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজার রাষ্ট্রীয় কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। এখন হামাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করলে তো সেখানে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।
কেউ ভাবছেন যে ট্রাম্পের এই বিবৃতির মাধ্যমে নিজের একটি অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নিলেন। যেন আগামীতে হামাসকে এই নিরাপত্তামূলক তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেন।
ব্লগ লিখিয়েরা ট্রাম্পের উল্লেখিত গাজায় নিহতের সংখ্যার বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা বলেছেন যে ড. বাসিম নাঈম একটি পূর্ণ তালিকা পেশ করেছেন, যাতে শহিদদের বিশদ তালিকা ও তথ্য রয়েছে। এটি ইসরাইলি কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের সব ধরনের দাবিকে খণ্ডন করে দেয়।
কেউ কেউ বলেছেন, ট্রাম্প তো মাত্র ৬০ হাজারের কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ তারাই গত দুই বছর যাবৎ নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছে।
সূত্র : আল জাজিরা