পশ্চিমতীরে ৩ হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলল ইসরাইলি বাহিনী

ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত কয়েক দশক ধরেই ইসরাইলি সেনাবাহিনী অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলেছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
পশ্চিমতীরের রামাল্লাহর কাছে ফিলিস্তিনি গ্রামে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে
পশ্চিমতীরের রামাল্লাহর কাছে ফিলিস্তিনি গ্রামে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে |সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে রামাল্লাহর কাছে একটি গ্রামে ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রায় তিন হাজার জলপাই গাছ ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলের প্রধান। শনিবার (২৩ আগস্ট) আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামাল্লাহর উত্তর-পূর্বে আল-মুগাইর গ্রামে ০.২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলার নির্দেশ জারি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, গাছগুলো গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া একটি ইসরাইলি বসতি স্থাপনের রাস্তার জন্য নিরাপত্তার হুমকি।

বৃহস্পতিবার থেকে আল-মুগাইয়েরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই গাছগুলো ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। মূলত এক ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীর অভিযোগের জেরে গ্রামটিকে অবরুদ্ধ করা হয়। তার অভিযোগ, তাকে ওই এলাকায় গুলি করা হয়েছে।

এদিকে গ্রাম পরিষদের উপ-প্রধান মারজুক আবু নাইম ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফাকে বলেন, শনিবার ভোর থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা ৩০টিরও বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাসিন্দাদের সম্পত্তি ও যানবাহন ধ্বংস করেছে।

ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত কয়েক দশক ধরেই ইসরাইলি সেনাবাহিনী অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে জলপাই গাছ উপড়ে ফেলেছে। এই গাছকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফিলিস্তিনি গবেষক হামজা জুবাইদাত বলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে ইসরাইলের ‘ক্রমাগত’ প্রচেষ্টার অংশ।

তিনি আল জাজিরা বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকেই ইসরাইল পশ্চিমতীরের গ্রামাঞ্চল ও শহরগুলো থেকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে। বর্তমানে যা চলছে তা ফিলিস্তিনিদের এই উচ্ছেদের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র। এটি ইসরাইলের কোনো নতুন প্রক্রিয়া নয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, আল-মুগাইয়ের পশ্চিমতীরের অন্যান্য গ্রামের মতো আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে প্রায় সম্পূর্ণরূপে কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভর করে। যেই এলাকায় তিন হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, সেটি রামাল্লাহ এলাকার সবচেয়ে উর্বর এলাকাগুলোর মধ্যে একটি।

গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমতীরেও ইসরাইলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে বসবাসরত হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের মানবিক-বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এই অঞ্চলজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীর হামলার ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৩৭০টিরও বেশি। এর মধ্যে রামাল্লাহ এলাকায় সবচেয়ে হামলার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ৫৮৫টি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে। পশ্চিমতীরের উত্তরে নাবলুস অঞ্চলে ৪৭৯টি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, একই সময়ে পশ্চিমতীরজুড়ে ইসরাইলি বাহিনী এবং ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ১২৯ শিশুসহ কমপক্ষে ৬৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।