আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারাধীন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে আবার তেল আবিব কেন্দ্রীয় আদালতে হাজির হন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ এবং জনসাধারণের আস্থার অপব্যবহারের অভিযোগসহ তিনটি আইনি মামলা রয়েছে। এই অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু নেতানিয়াহু এখনো এই অভিযোগগুলোর কোনোটিই স্বীকার করেননি।
ইসরাইলি জাতীয় রেডিও এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (KAN) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগামী তিন মাসের মধ্যে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বিবেচনা করছেন। লিকুডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুকে জনমতকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এজন্য অধিকৃত অঞ্চলগুলোর সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে ন্যায্যতা দেয়ার সুযোগ হিসেবে বিচারকে ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়েছেন। নেতানিয়াহু তার অভিযোগকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চান।
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রীর বিচারের ধারাবাহিকতা স্থগিত করার চেষ্টাও করছেন। মন্ত্রিসভার ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, আগাম নির্বাচন নেতানিয়াহুর বিচারের ধারাবাহিকতা বিলম্বিত করতে পারে এমনকি তা ব্যাহত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে মামলা করা হয়েছে। অধিকৃত অঞ্চলের আদালতে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থনও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারেনি।
১৩ অক্টোবর ইসরাইলি সংসদ নেসেটে বক্তৃতার সময় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার জন্য প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগকে অনুরোধ করেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুরোধ তেল আবিবে রাজনৈতিক সঙ্কট এবং মতবিরোধ কমাতে পারেনি।
দুর্নীতির মামলা এবং গাজা যুদ্ধের পরিণতি নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভাকে একটি ভঙ্গুর অবস্থানে ফেলেছে। নেতানিয়াহুর জোট ভেঙে পড়ছে এবং অতি-অর্থোডক্স জায়নবাদী দলগুলো মন্ত্রিসভা ছেড়ে চলে গেছে। হারেদি সামরিক পরিষেবা আইন, বিচারিক সংস্কার এবং ২০২৬ সালের বাজেট নিয়ে তীব্র মতবিরোধ মন্ত্রিসভায় গভীর বিভাজনের সৃষ্টি করেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, লিকুদ পার্টিও জনপ্রিয়তা হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারছে না।
তেল আবিবের অস্থিতিশীলতা এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা রাজনৈতিক পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাজা যুদ্ধ কেবল আন্তর্জাতিক চাপই বৃদ্ধি করেনি। বরং ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরে জনসাধারণের অসন্তোষও তীব্র করেছে।
গাজা যুদ্ধের মানবিক ও নিরাপত্তামূলক পরিণতি নির্বাচনি পরিবেশকে অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে এবং অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে রাজনৈতিক মেরুকরণ বৃদ্ধি করেছে। এই পরিস্থিতি তেল আবিবের অভ্যন্তরীণ সহিংসতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক কাঠামোকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে।
আগাম নির্বাচন আয়োজন অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে অভ্যন্তরীণ সহিংসতা সমাধানে সহায়তা করবে না। বরং তা আরো বাড়িয়ে তুলবে। মন্ত্রিসভার বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটাতে একটি বিস্তৃত জোট গঠনের বিষয়েও পরামর্শ করছে।
ইহুদিবাদী কোনো কোনো কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা কাঠামোগত পতনের পর্যায়ে প্রবেশ করছে। আগাম নির্বাচন এই পতনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং সরকারকে ক্রমাগত অস্থিরতার চক্রে নিমজ্জিত করতে পারে।
ইসরাইলের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট সমাধানে নেতানিয়াহু অক্ষম এবং আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান কেবল এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সমাধান নয়। বরং রাজনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করার একটি কারণ হিসেবেও কাজ করবে। অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান ইহুদিবাদী শাসনের সামাজিক ও কাঠামোগত পতনকেও ত্বরান্বিত করবে।
সূত্র : পার্সটুডে



