ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বন্দীদের পরিবার অভিযোগ করে বলছে, নেতানিয়াহু তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য আমাদের সন্তানদের জলাঞ্জলি দিচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কুদস এলাকায় নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এমন অভিযোগ করেন তারা।
গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চালানো ইসরাইলি বাহিনীর নির্মূল অভিযান এবং উপত্যকা দখল করে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার প্রেক্ষাপটে এমন অভিযোগ করেন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে এক বন্দীর বাবা বলেন, আজ গাজা যুদ্ধের ৭১৫তম দিন। এই দীর্ঘ সময় আমাদের সন্তানরা হামাসের সুড়ঙ্গের দোজখখানায় বন্দী।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, বন্দীদের অবহেলা করাই যার প্রতিজ্ঞা। তিনি এমন ব্যক্তি, যিনি নিজেকে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্ত রাখতে আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মতো নেতানিয়াহুও জানেন যে গাজায় অভিযান প্রসারিত করলে আমাদের বন্দীদের ও সেনাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তথাপি তিনি আমাদের সন্তানদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে এই অভিযান প্রসারিত করছেন। মূলত আমাদের সন্তানদের রক্ত তার কাছে নিজের চেয়ার বাঁচানোর মাধ্যম ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বক্তব্যের শেষে বলেন, আমরা যদি এখন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সজাগ না হই, তাহলে তিনি আমাদেরকে এক অনিঃশ্বেষ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন।
তিনি আরো বলেন, তবে নেতানিয়াহু নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এসব অপকর্মের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
আরেকজন বন্দী সৈনিকের মা বলেন, তার ছেলেকে দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে পাঠানো হয়েছে। অথচ সরকার এখন তার ক্ষমতা টেকাতে আমার ছেলেকে মারতে বসেছে।
তিনি আরো বলেন, নেতানিয়াহু এখন আমার ছেলেরই সহকর্মীদেরকে গাজায় পাঠাচ্ছে তার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে। তিনি ইহুদিদেরকে পাঠাচ্ছেন অপর ইহুদিকে মারার জন্য। তিনি কোনো কিছুই চিন্তা করছেন না। তিনি কেবল ভাবছেন নিজের ক্ষমতার কথা।
সেনাপ্রধান জামিরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি কেমন সেনাপ্রধান হলেন? আপনি কি নেতানিয়াহুর মতো সেনাপ্রধান যে নিজের সেনাদের মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিচ্ছেন? আপনি জানেন যে গাজায় অভিযান প্রসারিত করা হলে বন্দী সাধারণ নাগরিক ও সেনারা নিহত হবে। আপনি এও জানেন যে এখন যুদ্ধের ইতি টানার মতো একটি ব্যাপক চুক্তি করা সম্ভব। তবুও কিভাবে আপনি গাজায় অভিযান প্রসারিত করছেন?
ইসরাইলি বন্দীদের পরিবারগুলো জোর দিয়ে বলছে যে এখন যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অর্থ হলো বন্দীদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া এবং ইসরাইলকে এক অসীম যুদ্ধের ফাঁদে বন্দী করা।
তেল আবিব ধারণা করছে যে এখনো গাজায় অন্তত ৪৮ জন ইসরাইলি বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত রয়েছে। অপরদিকে ইসরাইলি কারাগারে অন্তত ১১ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের কেউ কেউ ক্ষুধা ও চিকিৎসার অভাবে মারাও গিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দীর্ঘ দুই বছরের এই সময়ে অন্তত ৬৫ হাজার ২০৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। আহত করেছে অন্তত ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ জনকে। এদের অধিকাংশই হলো শিশু ও নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত ক্ষুধার তীব্রতায় ৪৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৪৭ জনই শিশু।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি