গাজা উপত্যকার মতোই অধিকৃত পশ্চিমতীরেও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোর করে উচ্ছেদ করছে ইসরাইল।
গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চলতি বছর তিনটি শরণার্থী শিবিরে ৩২ হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া জেনিন, নুর শামস ও তুলকারেম শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি অভিযানের ফলে ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিমতীরে সবচেয়ে বড় গণ-স্থানচ্যুতি ঘটেছে।
পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সহিংসতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। ২০২৩ সাল থেকে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমতীরে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ বসতিতে বসবাসকারী ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের সহিংস আক্রমণ বাড়িয়েছে।
অধিকৃত পশ্চিমতীরের সি অংশে কোনো রকম ফিলিস্তিনি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। জাতিসঙ্ঘ নভেম্বরের শুরুতে রিপোর্ট করেছিল, সেখানে ইসরাইল বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে এবং এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে আরো ৫০০ জন গৃহহীন হয়েছে। ইসরাইলের দাবি, অনুমতিপত্র না থাকায় বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে। তবে এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়ি নির্মাণের অনুমতিপত্র পাওয়া কঠিন।
ইসরাইল পশ্চিমতীরে তার কর্মকাণ্ডের জন্য এখনো তেমন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়নি। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও বেসামরিক নাগরিকদের চলমান বাস্তুচ্যুতির জন্য ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইসরাইলি সরকারের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির লক্ষ্য হলো পশ্চিমতীরকে নিজেদের দখলে নেয়া। ইসরাইলের সংসদ অক্টোবরে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিকভাবে একটি বিলের অনুমোদন দিয়েছে। যা ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক আইনের একটি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।
পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনি ভূমিতে অবৈধ বসতিতে সাত লাখেরও বেশি ইসরাইলি বাস করে।
আগস্ট মাসে ইসরাইলের কট্টরপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ‘ই-১’ নামে একটি নতুন বসতি স্থাপনের ঘোষণা দেন। এতে অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমকে পশ্চিমতীর থেকে পৃথক করে তিন হাজার বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। যা তার মতে, ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে সমাহিত করবে।’
সূত্র : আল জাজিরা



