ইরানে জাতিসঙ্ঘের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ফের কার্যকর

এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর ব্যাপক জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
জাতিসঙ্ঘ
জাতিসঙ্ঘ |সংগৃহীত

এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানের ওপর ব্যাপক জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পশ্চিমা শক্তির সাথে শেষ মুহূর্তের পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর শনিবার গভীর রাতে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়।

ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা হামলা চালানোর তিন মাস পর এই নিষেধাজ্ঞা তেহরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সাথে সম্পর্কিত লেনদেনকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং এটি ইরানের সঙ্কটাপন্ন অর্থনীতিতে আরো প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পরপরই ইউরোপীয় ও মার্কিন কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেন, আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তেহরানের প্রতি ‘সরল বিশ্বাসে সরাসরি আলোচনা গ্রহণ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইরানের নেতাদের এমন কিছু করতে চাপ দিতে হবে, যা তাদের জাতির জন্য সঠিক এবং বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য উত্তম।’

ব্রিটিশ, ফরাসি ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তারা ‘ইরান যাতে কখনো পরমাণু অস্ত্র না পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে থাকবে।’

তারা তেহরানকে ‘যেকোনো ধরনের উত্তেজনামূলক পদক্ষেপ’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

ইরান জাতিসঙ্ঘ পরিদর্শকদের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিলেও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সম্পূর্ণ মজুদ হস্তান্তরের বিনিময়ে মাত্র স্বল্পমেয়াদি ছাড় প্রস্তাব করেছেন- যাকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেন।

ইরানের মিত্র রাশিয়া ও চীন এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার জন্য ১১ ঘণ্টার প্রচেষ্টা শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে পর্যাপ্ত ভোট অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে নিষেধাজ্ঞাগুলো জিএমটি সময় রোববার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সূত্রপাতকারী হিসেবে জার্মানির কাছে ‘আর কোনো বিকল্প ছিল না’। কারণ ইরান তার বাধ্যবাধকতা মেনে চলছিল না।

তিনি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে বলেন, ‘আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান যেন কখনো পরমাণু অস্ত্র অর্জন না করতে পারে।’

তিনি বলেন, তবে আমি জোর দিয়ে বলছি, আমরা এখনো একটি নতুন চুক্তির আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। কূটনীতি চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং তা অবশ্যই সম্ভব।’

রাশিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞা মানবে না। কারণ তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা অবৈধ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘অবশেষে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে গঠনমূলক সমাধানের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে, পশ্চিমা ব্ল্যাকমেইল ও চাপের মাধ্যমে তেহরানের কাছ থেকে একতরফাভাবে ছাড় আদায়ের আকাঙ্ক্ষাকেই উন্মোচিত করেছে।’

ইরান বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে তারা পারমাণু অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না।

সূত্র : এএফপি/বাসস