ফোরদো, ইরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি নির্জন পাহাড়ি জনপদ। বাইরে থেকে শান্ত, অথচ মাটির নিচে গোপনে ধ্বনিত হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের হৃদস্পন্দন। ইরানের পবিত্র নগরী কোমের নিকটবর্তী এই এলাকায় অবস্থিত ‘শহীদ আলী মোহাম্মাদি নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্স।‘ ইরানিরা আজ একে অন্যতম জাতীয় অহঙ্কার হিসেবে বিবেচনা করে।
এ স্থাপনা সম্পর্কে সম্প্রতি জাতীয় গণমাধ্যমের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হাসান আবেদিনির একটি ভিন্নধর্মী বিবরণ প্রকাশ করেছে ইরানের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক হামশাহরি। এতে তিনি বলেন, এই সপ্তাহে আমরা শহীদ আলিমোহাম্মাদি ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করি। এই কেন্দ্রটি শুধু প্রযুক্তির প্রতীক নয়। বরং শহীদ আলিমোহাম্মাদির মতো বিজ্ঞানযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মারক।
এক দশক আগের স্মৃতি এবং বর্তমান বাস্তবতার বিবরণ দেন আবেদিনি। আবেদিনি জানান, ঠিক দশ বছর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে আমি এই কেন্দ্রে এসেছিলাম। তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পাইপের মুখ ঢেকে রাখা ছিল। যেন ২০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করা না যায়, সেজন্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাথে করা এক চুক্তির আওতায় এই সংযোগগুলো সিল-গালা করে রাখা হয়েছিল।
ফোরদোকে বলা হয় ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ শিল্পের ‘হৃৎপিণ্ড।’ নিরাপত্তা বলয়ে আবদ্ধ এই স্থাপনা শত্রুর প্রতিটি হুমকিকে প্রতিহত করেছে। এটি রক্ষা করতে গিয়ে ইরানকে লড়তে হয়েছে সুদূরপ্রসারী স্পাই নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার ভাইরাস ও অত্যাধুনিক ড্রোনের বিরুদ্ধে।
দুশমনের এই যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ইরান লড়ছে ম্যালওয়ার স্টাক্সনেট থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইয়ের আত্মঘাতী ড্রোন হারমেস পর্যন্ত নানা রূপে। বিভিন্ন অঙ্গনে চলেছে ইরানের সাইবার ও প্রযুক্তি যুদ্ধ।
বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সাইবার অস্ত্র হিসেবে পরিচিত স্টাক্সনেট ভাইরাস স্থাপনাটি আক্রমণের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়। পরে হারমেস নামের একটি নজরদারি ড্রোন বা চালকহীন আকাশযান গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, ইরান প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে কতটা প্রস্তুত ও সজাগ।
আবেদিনি বলেন, এই স্থাপনায় ঢোকার সময় জোহরের আজানের ধ্বনি কানে ভেসে আসছিল। এই ধর্মীয় আবহই বুঝিয়ে দেয়, বিজ্ঞান ও ঈমান এখানে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানি বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগের বিবরণ বা পরমাণু পথের শহীদগণের স্মৃতি তুলে ধরা হয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেবল প্রযুক্তির এক বিজয়গাঁথা নয়। এ এক রক্তাক্ত আত্মত্যাগের ইতিহাসও। গোপন সুড়ঙ্গ, পাহাড় কেটে বানানো গবেষণাগার এবং কঠিন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি এই কর্মসূচির আরেকটি নির্মম বাস্তবতা রয়েছে। যেসব বিজ্ঞানীরা এর পেছনে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। ইরানের শত্রু ভাবাপন্ন শক্তির রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থিত গুপ্তচরবৃত্তি, সুনিপুণ হামলা এবং গাড়িবোমা সব মিলিয়ে এই হত্যাকাণ্ডগুলো যেন ছিল একটি ছায়াযুদ্ধের প্রকাশ্য অধ্যায়।
মোহসেন ফাখরিজাদেহ হলেন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির স্থপতি। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তেহরানের উপকণ্ঠ দামাবন্দের আবেসার্দে এক সুচিন্তিত হামলায় নিহত হন ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ। আধা-স্বচালিত এক অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়। ঘাতক যন্ত্রকে চালানো হচ্ছিল উপগ্রহ সংযোগের মাধ্যমে ইরানের সীমান্ত ছাড়িয়ে বিদেশ থেকে। এই প্রযুক্তিগত নিখুঁত হামলার দায় ইসরাইলের ওপর আরোপ করে ইরান। ফাখরিজাদেহ শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, বরং ছিলেন ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন সংস্থার (এসপিএনডি) প্রধান। তিনি ‘আমাদ প্রকল্প’ নামে পরিচিত একটি গোপন পরমাণু কর্মসূচির মূল পরিচালক বলেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের অভিযোগ।
মাসউদ আলি-মোহাম্মাদি নামের আরেক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তেহরানের নিজ বাড়ির সামনে গাড়ির সাথে সংযুক্ত একটি রিমোট-কন্ট্রোল বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাসউদ আলি-মোহাম্মাদি। তিনি ছিলেন থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সের একজন খ্যাতিমান গবেষক। ইরান বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মোসাদ সংশ্লিষ্ট এক গুপ্তচর ছিল, যাকে পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
দারিউশ রেজাইনেজাদ নিহত হয়েছিলেন নিজ সন্তানের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে তেহরানের একটি সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন দারিউশ রেজাইনেজাদ। হামলার সময় তিনি ছিলেন তার পাঁচ বছরের মেয়ের সাথে। তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক হলেও তার পরমাণু প্রকল্পে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ ছিল। এই হত্যাকাণ্ড ছিল এতটাই নির্মম যে তা ইরানি সমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
মোস্তাফা আহমাদি রোশনকে হত্যা করা হয় চলন্ত গাড়িতে বোমা ফাটিয়ে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে গাড়ির সাথে চুম্বকযুক্ত বোমা সংযুক্ত করে হত্যা করা হয় মোস্তাফা আহমাদি রোশনকে। কাজের জন্য বের হওয়ার পরই তেহরানের ব্যস্ত সড়কে বোমাটি ফাটানো হয়। আহমাদি রোশন ছিলেন নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রে উপ-বাণিজ্যিক পরিচালক। কমার্স ডিরেক্টর। তার দায়িত্বের আওতায় ছিল পরমাণু জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বেড়াজাল এড়িয়ে পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া।
ছায়াযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় মৃত্যু ভয় নয়, দৃঢ়তা। এই হত্যাকাণ্ডগুলো ইরানকে ক্ষতবিক্ষত করলেও পরমাণু কর্মসূচি থেমে যায়নি। বরং এই মৃত্যুগুলোকে ‘শহীদ’ হিসেবে গণ্য করে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর তাদের নামে আয়োজন হয় স্মরণসভা। বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয় গবেষণা কেন্দ্র। তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্বুদ্ধ করা হয় তাদের পথ অনুসরণে। এভাবে শহীদের পথকে নিজদের পথ হিসেবে ইরানি তরুণ গবেষকরা এগিয়ে আসতে থাকে। রাহবার হিসেবে পরিচিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এসব হত্যাকে ‘জুলুমের প্রতিচ্ছবি’ এবং ‘বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক মহলে এই হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে ছিল নানা প্রতিক্রিয়া। জাতিসঙ্ঘ এদের বেশ কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু তদন্ত বা বিচার কার্যত এগোয়নি। পশ্চিমা শক্তিগুলো অনেক সময় মৌন থেকেছে। আবার কখনো কখনো পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে মূলত ইহুদিবাদী ইসরাইল পরিচালিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ছিল ‘প্রতিরক্ষামূলক।’
পরমাণু শহীদদের উত্তরাধিকার হয়ে উঠেছেন ইরানের গবেষকরা। ইরান এই বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগকে জাতীয় প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে। ‘আমরা শহীদদের পথেই চলছি’ এই স্লোগান এখন ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও রাষ্ট্রীয় প্রচারে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়। সরকার বলছে, এই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আজ ফোরদো, নাতাঞ্জ, আরাকের মতো কেন্দ্রগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তেহরানের কঠোর বার্তা- বিজ্ঞান থেমে থাকবে না, আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।
এই আত্মত্যাগের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে এক ধরনের নৈতিক যুক্তি। যেখানে পরমাণু কর্মসূচি আর কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে জাতীয় পরিচয়ের অংশ। ফোরদো এখন শুধু একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনাই নয়। বরং একটি প্রতীক। নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার, ছায়াযুদ্ধের ভেতরে এক নীরব জয়ের নিশান।
‘পিট’-এর মধ্যে বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের সম্মিলন ঘটেছে। ফোরদোর কেন্দ্রীয় অংশকে বলা হয় ‘পিট’ বা ‘গহ্বর।’ এখানে হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ মেশিন সারি সারি দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিটি মেশিন ৬০ হাজার ঘূর্ণন প্রতি মিনিটে ঘুরে ইউরেনিয়ামকে সমৃদ্ধ করছে। তবে অনেকগুলোর মধ্যে এখনো ইউএফ৬ গ্যাস ঢোকানো হয়। অর্থাৎ পুরো দস্তুর কাজ শুরু করেনি। প্রতি ১৬৪টি সেন্ট্রিফিউজ একটি ক্যাসকেড বা বহর গঠন করা হয়েছে। এই ‘গহ্বরে’ ফুল ও গাছপালার পরিবর্তে শহীদদের ছবি, কোরআনের আয়াত ও ইমামদের বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে। তরুণ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদরা এই কাজের মূল চালিকাশক্তি। কোনো কোনো ব্যবস্থাপকের মাথায় সাদা চুল দেখা যায়, কিন্তু তাদের চোখে এখনো প্রতিভার আগুন জ্বলছে।
এ যেন প্রযুক্তির এক মহাকাব্য।
এই যন্ত্রগুলোতে প্রায় ১০০টি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি অংশ আলাদা আলাদা বিষয়ে পারদর্শী বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত পরিকল্পনায় বানানো করা হয়। উচ্চ গতিতে ঘূর্ণনের সময় একটি বিন্দু ঘামও যদি গায়ে লাগে, তবে তা গোটা যন্ত্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অতীতে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হতো। ফলে তেমন গতি দিতে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন ব্যবহৃত হয় বিশেষ ধাতব মিশ্রণ, যা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ মিটারেরও বেশি গতি তৈরি করতে সক্ষম। নতুন প্রজন্মের আইআর-৬ সেন্ট্রিফিউজের সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা (এসডব্লিউইউ) হচ্ছে ৯। অর্থাৎ একটি আইআর-৬ মেশিনের কাজ একটি সারির ৯টি আইআর-১ মেশিনের সমান।
প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার পথে ইরান, নিষেধাজ্ঞা থেকেও শক্তি সঞ্চয় করছে। বাইরের নিষেধাজ্ঞা এই প্রকল্পকে থামাতে পারেনি। বরং তা ইরানকে স্থানীয় এবং স্বদেশীয় প্রযুক্তির পথে নিয়ে গেছে। এখন সব যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। আইএইএ-র ক্যামেরাগুলো কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ছবি তোলে, ভিডিও করে না। পরমাণু পরিদর্শকরাও নিয়মিত আসেন।
আবেদিনির ভাষায়, এখানে যে ছেলেগুলো পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের চোখ এক সেকেন্ডের জন্যও সরে না। কারণ, এক মুহূর্তের অস্থিরতায় বাতাসের চাপ বা বৈদ্যুতিক প্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ফোরদো যেন এক কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র। এই স্থাপনা নিয়েই বহুবার আন্তর্জাতিক আলোচনা হয়েছে। জেনেভা, ভিয়েনা, ইস্তানবুল, বাগদাদ, মস্কো ও আলমাতিতে অনুষ্ঠিত নানা বৈঠকে ফোরদো কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় ছিল। আবেদিনি এসব আলোচনা সরাসরি যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, একবার আমি এক ইরানি যুবকের মাথার ওপর একটি বাক্য লেখা দেখেছিলাম, ‘আমরা এই পাহাড় রক্ষা করব, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের উহুদের মানুষ না বলে।’ এই বাক্যটির মধ্যে দৃঢ় সংকল্প ও আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।
কেন ইরানকে পারমাণবিক প্রযুক্তি চর্চায় বাধা দেয়া হয়- সে প্রশ্ন অনেকেই করেন। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রচেষ্টা নিয়ে পশ্চিমা শক্তির দুশ্চিন্তার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। কিন্তু পরমাণু কর্মসূচি চালানোর জন্য ইরানের রয়েছে অনেক কারণ।
১. চিকিৎসা খাতে প্রয়োগ : ইরানে প্রায় ১০ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছে। তেহরানের রিসার্চ রিঅ্যাক্টরের জন্য জ্বালানি সরবরাহ না করায় ২০১০ সালে বড় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল।
২. কৃষি ও শিল্প: কীটনাশক, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, অপারেশন থিয়েটার জীবাণুমুক্তকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নৌযান পরিচালনায় ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
৩. কূটনৈতিক হাতিয়ার: সমৃদ্ধকরণের মাত্রা কমানো বা বাড়ানো আন্তর্জাতিক দর কষাকষিতে এক কৌশল হতে পারে, যেমনটি দেখা গেছে জেসিপিওএ নামে পরিচিত পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক আলোচনায়।
৪. কৌশলগত প্রতিরোধ: প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও স্বনির্ভরতা ইরানের জন্য একটি কৌশলগত রক্ষাকবচ সৃষ্টি করেছে, যা শত্রুদের হুমকি রোধ করে।
৫. বহুবিধ প্রযুক্তিগত বিকাশ: পরমাণু পদার্থবিদ্যা, যন্ত্র প্রকৌশল, ধাতুবিদ্যা, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ভ্যাকুয়াম ও ন্যানো টেকনোলজিতে একসঙ্গে অগ্রগতি সাধন হয়েছে পরমাণু কর্মসূচির পথ ধরেই।
৬. শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন: এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার মান উন্নত করেছে, এবং জ্ঞান ছড়িয়ে পড়েছে মহাকাশ, চিকিৎসা, সেন্সর প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে।
৭. স্থানীয় শিল্পোন্নয়ন: নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে ব্যয় সাশ্রয় হয়, বিদেশি সরবরাহকারীর ইরানের ওপর নির্ভরতা কমে। অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশিরা উচ্চমূল্যেও প্রযুক্তি দিতে রাজি হয় না।
৮. আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা: পরমাণু অস্ত্র নিরোধ চুক্তি বা এনপিটিতে সই করেছে ইরান। এ চুক্তি অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জন ইরানের অধিকার রয়েছে। ইরান সেই অধিকারকে ভিত্তি করেই বিশ্বকে দেখিয়েছে কিভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তির বাইরে না গিয়ে স্থানীয় প্রযুক্তি উন্নয়ন করা যায়।
ইরানের পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে শেষ কথা হলো বিজ্ঞান, আত্মত্যাগ ও জাতীয় গর্বের এক মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।
ফোরদো কেবল একটি পারমাণবিক স্থাপনা নয়। বরং এটি ইরানি তরুণদের অধ্যবসায়, আত্মত্যাগ এবং প্রযুক্তির সাথে বিশ্বাসের সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি। এই গোপন গুহার ভেতর যে পরিশ্রম আর প্রতিজ্ঞার আলোছায়া খেলে, তা যুগে যুগে অনুপ্রেরণা জোগাবে ইরানসহ সারা বিশ্বের স্বাধীনচেতা জাতিগুলোকে।