ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা গাজি হামদ বলেছেন, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় একের পর এক সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা দোহায় আলোচনারত হামাস প্রতিনিধি দলের উপরও হামলা করেছে। তাদের এসব পদক্ষেপ এ সত্যকেই প্রকাশ করে যে দখলদার শক্তি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সেজন্য তারা এখন থেকে কেবল ফিলিস্তিনিদেরকেই টার্গেট করবে না। বরং পুরো ইসলামী বিশ্বকেই তারা টার্গেট করবে।
বুধবার আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে হামদ বলেন, আমরা তখন আমেরিকা প্রস্তাবিত একটি চুক্তিপত্র নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কাতারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র সেটি আমাদের কাছে দিয়েছিল। আলোচনা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই আমরা একটা ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজ দেখেই আমরা বুঝে গেলাম যে এটি ইসরাইলি হামলার শব্দ। তখন আমরা খুবই দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করি। এরই মধ্যে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে সভাস্থলে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে। মুহূর্তটি খুবই কঠিন ও ভয়াবহ ছিল। তবুও আল্লাহর বিশেষ রহমতে আমরা বেঁচে গেছি।
তিনি আরো বলেন, দোহায় ইসরাইলি হামলা এই বার্তাই দেয় যে এখন সকল আরব বিশ্বের রাজধানীই ইসরাইলের টার্গেটে রয়েছে।
হামাসের এই নেতা বলেন, ‘ইসরাইল শুরু থেকেই টার্গেট করে ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি, সহিংসতা ও জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, তাদের এই যুদ্ধ কেবল হামাসের বিরুদ্ধেই নয়। বরং এটি আরব সমাজের সম্মান, নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন কোনো আরব দেশের রাজধানীই তাদের হামলা থেকে নিরাপদ নয়। এর প্রমাণ তারা দামেশক, বৈরুত ইত্যাদি রাজধানীতে হামলা চালিয়ে দিয়েছে। তারা তো এখন কায়রো, আবুধাবী, রিয়াদ ও বাগদাদকেও হুমকি দিচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দেয়ার হুমকি
কিছুদিন আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রই পরিবর্তন করে দেবেন। নেতানিয়াহুর এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হামদ। তিনি বলেন, তার এই বিবৃতির পর গোটা আরব বিশ্বের অবস্থান একই রকম হয়ে যাওয়ার দরকার ছিল।
তিনি আরো বলেন, এটি মূলত আমেরিকার সমর্থনে অহঙ্কারী হয়ে উঠার একটি উদাহরণ মাত্র।
হামদ বলেন, আমরা ফিলিস্তিনিরা তাদের সাথে যুদ্ধ করি এবং ইস্পাত কঠিনভাবে তাদের সামনে দাঁড়াই। এটিই তাদের উন্নাসিকতা বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং এখানে আরব ও মুসলিম দেশগুলোকেও সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তবেই এই আগ্রাসন বন্ধ হবে। এর আগে দখলদাররা কোনো লাল রেখা কিংবা নীল রেখা মানবে না।
বন্দীদের ইস্যু
বন্দীদের ইস্যুতে হামদ বলেন, ইসরাইল যদিও ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে অত্যন্ত নির্মন আচরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু হামাস ইসরাইলি বন্দীদের সাথে তেমন আচরণ করছে না। বরং প্রত্যেকের মান অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করা হচ্ছে।
এ সময় তিনি ইঙ্গিত দেন যে দখলদাররা নিজেরাই বন্দীদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এ সময় বন্দীবিনিময় চুক্তির একটি নির্দিষ্ট নীতিতে অগ্রসর করা উচিৎ।
যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে হামদ বলেন, আমেরিকার মধ্যস্থতাকারী পক্ষের সাথে হামাসের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এই যুদ্ধে তারা বড় দুটি অপরাধ করেছে। তা হলো
-চুক্তির ক্ষেত্রে তাদের কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড ছিল না। যে কারণে তারা একেক বার প্রস্তাব রাখে। আবার কিছুদিন পর সেটা থেকে ফিরে আসে।
-তারা প্রত্যেকবার প্রস্তাব দিয়েই দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। এতে তাদের প্রতি ফিলিস্তিনি পক্ষের বিশ্বাস উঠে গেছে।
এ সময় তিনি ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণেরও অভিযোগ করেন।
পরিশেষে হামদ বলেন, আজ গাজা ভূখণ্ডে যা চলছে, তা মূলত উম্মাহের সম্মান ও একতার জন্য পরীক্ষা। এহেন অবস্থান গোটা মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে আরব বিশ্বকে আহ্বান জানায় যে কেবল নিন্দার মধ্যে না থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সূত্র : আল জাজিরা