ইরানের ওপর জাতিসঙ্ঘের আরোপ করা অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা এক দশক আগে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তির পরে তুলে নেয়া হয়েছিল। সেটি আবারো আরোপ করতে যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘ।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি গত মাসে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দেয়ার পর এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চিঠিতে তারা ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। ওই প্রক্রিয়ায় ইরানকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য ৩০ দিনের সময় দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপের এই উদ্যোগকে ‘অন্যায্য, অবিচারপূর্ণ ও অবৈধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
এই পদক্ষেপ ছয় মাসের জন্য বিলম্বিত করার জন্য চীন ও রাশিয়ার উদ্যোগে শেষ মুহূর্তে একটি প্রস্তাব আনা হলেও সেটি ১৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিষদে মাত্র চারটি ভোট পেয়েছে। ফলে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামীকাল রোববার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক কার্যক্রম জোরদার করার অভিযোগ উঠে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ)’ থেকে সরিয়ে নেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে এই সমঝোতা হয়েছিল। ট্রাম্প একে ত্রুটিপূর্ণ বলে সমালোচনা করেন।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র জুন মাসে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার পরিদর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে নতুন পারমাণবিক চুক্তি অর্জনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
চলতি সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘে পেজেশকিয়ান বলেন, তার দেশ কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করবে না। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি বিদেশী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থির করার জন্য অজুহাত খুঁজছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আগের হুমকি সত্ত্বেও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে যাবে না। তবে তিনি বলেন, তেহরানের এই আশ্বস্ততা দরকার যে তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইল আক্রমণ করবে না। যাতে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম স্বাভাবিক করা যায়।
আবার এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইতোমধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে বলে তিনি মনে করেন।
এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে নিষেধাজ্ঞা, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ইরান এয়ার ও ইরান শিপিং লাইনের কার্গো পরিদর্শনের অনুমোদন।
এর মধ্যে যদি কোনো সমাধান না হয়, তাহলে প্রথমে জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এরপর আগামী সপ্তাহে আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা।
নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ ঠেকাতে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পুনরায় আলোচনা শুরু করতে এবং জাতিসঙ্ঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা করতে ও উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দিতে ইরানকে অনুরোধ করেছিলেন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
শুক্রবার জাতিসঙ্ঘে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু ই-৩ (যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্স) সেটিকে সমাধিস্থ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা আসলে একেবারে মৃত অবস্থায় পৌঁছেছে।’
এদিকে শুক্রবার আইএইএ নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার পর বিরতির কারণে বন্ধ থাকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর পরিদর্শন এই সপ্তাহে আবার শুরু হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি