ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির মাঝে আবারো বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো ১৫ জন।
গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার গাজার সিটি উত্তরাংশ ও খান ইউনিসের দক্ষিণাংশে আকাশপথে এই হামলা চালায় ইসরাইল। গাজা নগরীর উপকণ্ঠে সাবরা এলাকায় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। নগরীর পশ্চিমে শাতি শরণার্থীশিবিরেও হামলা হয়। হামলা হয় আল–শিফা হাসপাতালের আশপাশে। কামান থেকে গোলা ছোড়া হয় মধ্য গাজার দেইর আল–বালাহ এলাকার পূর্বের বিভিন্ন স্থানে।
এর আগে ইসরাইলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ আনে ইসরাইল। এর জেরে গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা’ চালানোর নির্দেশ দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মঙ্গলবার ইসরাইলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় ইসরাইলি সেনা ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। পরে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলার জন্য হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ব্যাপক শক্তিসহকারে ইসরাইল এর জবাব দেবে।
পরে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গাজায় তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরাপত্তাবিষয়ক পরামর্শের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে গাজায় অবিলম্বে শক্তিশালী হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি থেকে বের হয়ে আসার অজুহাত খুঁজছেন।
তবে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আক্রমণ নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
বিবৃতিতে বেসামরিক হতাহতের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘আমরা আবারো জোর দিয়ে বলছি যে স্থায়ী শান্তির আশা রক্ষা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধবিরতির পূর্ণ সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমরা ইসরাইলের প্রতি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি,’ বলা হয় বিবৃতিতে।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে মালয়েশিয়াও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন যাতে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে শান্তি চুক্তি ‘ন্যায্য’ হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় শান্তিরক্ষী মোতায়েনেরও প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার নেতা কুয়ালালামপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলন শেষ করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছি, গাজা শান্তি উদ্যোগ অবশ্যই ব্যাপক হতে হবে, টেকসই হতে হবে, ন্যায্য হতে হবে।’
ট্রাম্প শীর্ষ সম্মেলনে প্রথম দিনেই যোগ দিয়েছিলেন।
আনোয়ার বলেন, তিনি রোববার ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়িতে চড়ে ‘সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার’ করেছেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প ব্যক্তিগত আলোচনায় একজন ভালো শ্রোতা। তিনি কিছু মতামত দিয়েছেন। আমি কিছু বিষয়ে বিনয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তার পর থেকে উপত্যকাটিতে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৮ হাজার ৫২৭ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।
সূত্র : আলজাজিরা



