ইসরাইলের ফেরত দেয়া ফিলিস্তিনিদের লাশে নির্যাতনের চিহ্ন

নাসের হাসপাতালে লাশ গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের সদস্য সামেহ হামাদ বলেন, ’নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ডের চিহ্ন রয়েছে।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা |সংগৃহীত

ইসরাইলের ফেরত দেয়া ফিলিস্তিনিদের লাশে ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ণ পাওয়া গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইল রেডক্রসের মাধ্যমে ৪৫ জন ফিলিস্তিনির লাশ ফেরত দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফেরত পাঠানো লাশের সংখ্যা ৯০-তে পৌঁছেছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মেডিক্যাল টিমগুলো ‘অনুমোদিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রোটোকল অনুসারে’ ফিলিস্তিনিদের লাশ তাদের পরিবারের পৌঁছে দেয়ার জন্য পরীক্ষা, নথিভুক্ত ও প্রস্তুত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার ও বুধবার নাসের হাসপাতালে আসা লাশগুলো সম্পর্কে ফরেনসিক দল ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দিয়েছে। লাশগুলোতে শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতাল সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, কিছু লাশের চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরানো ছিল। যা ‘মাঠপর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করার দিকে ইঙ্গিত দেয়।

ইসরাইল আরো লাশ হস্তান্তর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও কর্মকর্তারা জানাননি, তাদের কাছে কতজন আছে বা কতজনের লাশ ফেরত পাঠানো হবে। এই লাশগুলো ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের স্থল অভিযানের সময় কবরস্থান থেকে খুঁড়ে তুলেছিল, না যুদ্ধের সময় নিহত বন্দীদের, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ফেরত পাঠানো লাশের অনেকগুলেই পচে গেছে অথবা পুড়ে গেছে। কিছু লাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা দাঁত নেই, আবার কিছু লাশে ধুলো-বালি লেগে ছিল। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, গাজায় ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম প্রবেশের ওপর ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় সময়ই লাশ শনাক্তকরণের জন্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও পোশাকের উপর নির্ভর করতে হয়।

যে ফরেনসিক দলটি লাশ গ্রহণ করেছে তারা জানায়, কিছু লাশে এখনো শেকল বাঁধা রয়েছে অথবা শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। নাসের হাসপাতালে লাশ গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের সদস্য সামেহ হামাদ বলেন, ’নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ডের চিহ্ন রয়েছে।’

লাশগুলো ২৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের। বেশিভাগের গলায় ব্যান্ড ছিল, যার মধ্যে একজনের গলায় দড়ি পরানো ছিল। অধিকাংশ লাশের পরনে ছিল বেসামরিক পোশাক, তবে কিছু লাশের পোশাক ইঙ্গিত দেয় যে তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার লাশ পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রেডক্রস ও ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে, আরো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।

সূত্র : আল জাজিরা