বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণার পর এশিয়ার অধিকাংশ শেয়ারবাজারে মঙ্গলবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে যে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসবে।
সোমবার এ খবরের পর বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার, তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধি পায়। দুই দেশ জানায়, তারা পারস্পরিক চাপ সৃষ্টিকারী অধিকাংশ শুল্ক কমাবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করবে, যা অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
বাসস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি জেনেভায় দু’দিনের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য তাদের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে এবং চীন তাদের ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করবে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে আবারো আলোচনা হবে উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ উদ্যোগকে সম্পূর্ণ পুনর্গঠন হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ খবরে সোমবার শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মঙ্গলবারও এশিয়ার বেশিভাগ বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। টোকিও ও তাইপে এক শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি সাংহাই, সিডনি, সিঙ্গাপুর, সিউল, ওয়েলিংটন ও ম্যানিলা বাজারও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
তবে হংকং বাজার ১ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে, যদিও আগের দিন তা তিন শতাংশ বেড়েছিল।
এদিকে সোমবারে বৃদ্ধির পর তেল ও ডলারের দাম কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
এশিয়ায় এ উত্থানের আগে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা গেছে- নাসদাক ৪ শতাংশের বেশি, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ৩.৩ শতাংশ এবং ডাও ২.৮ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির শেয়ার ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট খোলাখুলিভাবে ঘোষণাকে স্বাগত জানানোর পর এশিয়ায় ব্যাপক লাভ হয়েছে।
এইচএসবিসি’র বিশ্লেষকরা বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছে। বাজারে এখন স্পষ্ট ইতিবাচকতা তৈরি হয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন আরো সমঝোতা আসছে।
তবে সতর্কতার কথা জানিয়ে তারা বলেন, ‘এগুলো সরলরেখায় এগোবে না। ভবিষ্যতের আলোচনায় ঝুঁকি থেকেই যাবে।’
আইজি’র প্রধান বাজার বিশ্লেষক বলেন, ‘দুই দেশই বুঝতে পেরেছে সম্পর্ক মেরামত এবং বিশাল শুল্ক আরোপের ক্ষতি এড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।’
তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘এখনও ১০ এবং ৩০ শতাংশ হারে যেসব শুল্ক রয়েছে, তা কয়েক মাস আগেও কল্পনার বাইরে ছিল। এর প্রকৃত প্রভাব অর্থনৈতিক তথ্য এবং কোম্পানির আয়ে সময় নিয়েই প্রতিফলিত হবে।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর অ্যাড্রিয়ানা কুগলার বলেন, শুল্ক হ্রাস সত্ত্বেও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চাপের মুখে ফেলবে।