আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কুনার ও নঙ্গারহার প্রদেশে ছয় মাত্রার এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তালেবান সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, শতাধিক মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে। আহত হয়েছে আরো শত শত মানুষ।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিবিসির লাইভে এ তথ্য জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে কুনার প্রদেশের নোরগাল জেলার মাজার উপত্যকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র আট কিলোমিটার গভীরে। ফলে এর প্রভাব মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়।
কুনার প্রদেশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বহু গ্রাম ধসে পড়েছে এবং বাড়িঘর মাটির নিচে চাপা পড়েছে। এক কর্মকর্তা এটিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার কারণে উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে হেলিকপ্টারের মাধ্যমেই লাশ উদ্ধার ও আহতদের হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কেবল একটি গ্রামেই ২১ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। মাজার উপত্যকার কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি ধসে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি হেলিকপ্টার উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছে। আহতদের মধ্যে অনেককে কাবুল ও নঙ্গারহারের হাসপাতালে আনা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর অন্তত ১৩ বার আফটারশক হয়েছে। এতে আতঙ্কিত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা স্থানে রাত কাটিয়েছে। নঙ্গারহার প্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবীরা রক্ত দিতে ভিড় জমিয়েছে।
তালেবান সরকার জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সীমিত সম্পদ নিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০২২ সালে একই ধরনের ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। এবারো ভয়াবহ প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।