ফিলিপাইনে টাইফুনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ২ জনের মৃত্যু

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমেগির প্রভাবে মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যায় কমপক্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন; ৩ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ফিলিপাইনে টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
ফিলিপাইনে টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা |সংগৃহীত

মঙ্গলবার টাইফুন কালমেগি মধ্য ফিলিপাইনে আঘাত হানার পর, বাসিন্দারা ছাদে আশ্রয় নিয়েছে এবং প্লাবিত রাস্তায় গাড়ি ভেসে যেতে দেখা গেছে। প্রকৃতিক দুর্যোগটিতে কমপক্ষে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যরাতের কিছু আগে আঘাত হানা শক্তিশালী ঝড়ের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সকাল ৮টা পর্যন্ত টাইফুনটি সেবু ও নেগ্রোস দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।

ঘণ্টা ১৮৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ায় গাছপালা উপড়ে পড়ে ও বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়ে।

সেবুর তথ্য কর্মকর্তা রোন রামোস বলেন, ‘বাড়ির ছাদে আটকা পড়া মানুষ উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’

কিছু আশ্রয়কেন্দ্রও প্লাবিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধির সময় সেবু সিটির উপরের তলায় আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৮ বছর বয়সী ডন ডেল রোজারিওও ছিলেন।

তিনি বলেন, আমাকে যা বলা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় যে ‘পানি এতোটাই দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে ভোর ৩টা নাগাদ বন্যা শুরু হয়। ভোর ৪টা নাগাদ বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এর ফলে মানুষ (তাদের ঘর থেকে) বের হতে পারছিল না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি এবং এটিই আমাদের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার।’

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর, এখনো শহরের শত শত মানুষ তাঁবুর বাস করছে।

রামোস বলেন, তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য জোরপূর্বক সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সিভিল ডিফেন্স অফিসের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাফায়েলিটো আলেজান্দ্রো স্থানীয় রেডিওকে বলেন, টাইফুনের গতিপথ থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দুঃখজনকভাবে বোহোল প্রদেশে গাছ ভেঙে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

দুর্যোগ কর্মকর্তা দানিলো আতিয়েনজা বলেন, দক্ষিণ লেইতে প্রদেশে একজন বয়স্ক ব্যক্তিও ডুবে মারা গেছেন।

রেডিও আউটলেট ডিজেডএমএমকে বলেন, ‘বয়স্ক লোকটি উপরের তলায় আটকা পড়েছিলেন এবং তিনি কোনো সাহায্য পাননি।’

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। এগুলো দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতেই আঘাত হানে। ওই এলাকাগুলোতে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ বাস করে।

রাজ্য আবহাওয়া পরিষেবা বিশেষজ্ঞ চারমাগনে ভারিলা সোমবার জানান, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ কমপক্ষে আরো তিন থেকে পাঁচটি ঝড় আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়গুলো আরো ঘন ঘন হচ্ছে এবং আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

দিনাগাট দ্বীপপুঞ্জ প্রদেশে সোমবার রাতে ঝড়ের সময় ৩৪ বছর বয়সী মিরিয়াম ভার্গাস তার বাচ্চাদের সাথে অন্ধকারে বসে প্রার্থনা করছিলেন। দ্বীপপুঞ্জটিতে কালমেগি প্রথম আঘাত হানে।

ভার্গাস বলেন, প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে আমরা সিঁড়িতে বসে প্রার্থনা করছিলাম।

তিনি আরো বলেন, ‘বাতাস শোঁ শোঁ আওয়া শুনছিলাম এবং বাসাতে জিনিসপত্র পড়ার শব্দ পাচ্ছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা আগে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল এবং আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।’

সোমবার নিকটবর্তী লেইট দ্বীপে দুর্যোগ কর্মকর্তা রোয়েল মন্টেসা বলেন, ‘পালো ও তানাউয়ানে’ লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সূত্র : বাসস