আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৬২২

আফগানিস্তানের হানা ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে ৬২২ জন নিহত এবং এক হাজার ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আফগানিস্তানের ক্ষতিগ্রস্ত নাঙ্গারহার প্রদেশের একটি হাসপাতালের দৃশ্য
আফগানিস্তানের ক্ষতিগ্রস্ত নাঙ্গারহার প্রদেশের একটি হাসপাতালের দৃশ্য |সংগৃহীত

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় আঘাত হানা ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছে এক হাজার ৫০০ জনের বেশি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন কানি বলেন, রোববার মধ্যরাতের ঠিক আগে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কুনার প্রদেশে ৬১০ জন নিহত হয়েছে এবং এক হাজার ৩০০ জন আহত ও অসংখ্য ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভূমিকম্পে নাঙ্গারহার প্রদেশে ১২ জনের মৃত্যু ও ২৫৫ জন আহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে কুনার প্রদেশের নোরগাল জেলার মাজার উপত্যকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এটির কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং কাবুল থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র আট কিলোমিটার গভীরে। ফলে এর প্রভাব মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবিসি লাইভে জানানো হয়, প্রভাবিত এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত। ফলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

স্থানীয়রা এটিকে দেশের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ভূমিকম্পের ফলে পাহাড় ধসে সড়কপথ বন্ধ হয়ে পড়ায় উদ্ধারকর্মীরা সরাসরি দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন না। প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আহতদের হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। বিশেষ করে সাওকি জেলার দেবা গুল ও নুর গাল জেলার মাজার দারার দিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।

আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, দুঃখজনকভাবে ভূমিকম্পে আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে প্রাণহানি ও ব্যাপক সম্পত্তি ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা ও বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন, কেন্দ্রীয় ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশের সহায়তা দল তৎপর।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, প্রধান ভূমিকম্পের পর একই এলাকায় কমপক্ষে দু’টি পাঁচ দশমিক দুই মাত্রার আফটারশক হয়েছে।

ইতোমধ্যে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইছে। হেলিকপ্টার দিয়ে আহতদের নাঙ্গারহার বিমানবন্দরে আনা হচ্ছে, সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তর করা হচ্ছে। স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে এবং হাসপাতালে রক্তদানেও এগিয়ে এসেছে।

এফএমপি ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কুনার প্রদেশের মারজার উপত্যকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং সেখানে শতাধিক মানুষ আহত ও নিখোঁজ রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শারাফাত জামান আল জাজিরাকে বলেন, ‘উদ্ধার কার্যক্রম এখনো চলছেই এবং কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’

তিনি আরো জানান, নিহত ও আহতের সংখ্যা পরিবর্তিত হচ্ছে। কুনার, নাঙ্গারহার এবং রাজধানী কাবুল থেকে মেডিক্যাল টিম অঞ্চলটিতে পৌঁছেছে। অনেক এলাকায় এখনো হতাহতের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই নিহত ও আহতের সংখ্যা রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে তা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।