ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী দু’টি ভূমিকম্পের পর শনিবার ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানকার বেঁচে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করছেন। রাতভর কয়েক শ’ আফটারশক (ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন) দেশটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার উপকূলে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৪ ও ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের আফটারশকের আশঙ্কায় মিন্দানাও দ্বীপের অনেক উপকূলীয় বাসিন্দারা ঘরের বাইরে রাত কাটায়।
ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে কমপক্ষে আটজন প্রাণ হারিয়েছে। তারা এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করছে।
৪০ হাজার জনসংখ্যার মিন্দানাও পৌরসভার মানয়ে শনিবার সকালে মানুষ ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করছে এবং ঘরবাড়ি ও অন্যান্য ভবনের ভাঙা কাচ পরিষ্কার করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ভেন লুপোগান বলেন, ‘ভূমিকম্পে আমাদের ছোট বাড়ি ও ছোট দোকানটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের ঘুমানোর জায়গা নেই, বিদ্যুৎ নেই এবং আমাদের খাওয়ার মতো কিছু নেই।’
ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় দ্বীপ সেবুতে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটিতে ৭৫ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ৭২ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
মানে শহরের বেশিভাগ মানুষ আফটারশকের আশঙ্কায় তাঁবু, ইম্প্রোভাইসড টার্প ও হ্যামকের নীচে, যানবাহনের ভেতরে, পার্কে বা রাস্তার ধারে বিছানো মাদুরের ওপর ঘুমিয়েছিল। কারণ আফটারশকগুলো ১৮ লাক্ষ লোকের আবাসস্থল অঞ্চলটিতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানয়ে সরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য বাইরে বিছানায় শুয়ে চিকিৎসার অপেক্ষা করছিলেন।
শুক্রবার সেখান থেকে অনেককেই বাইরে বের করে আনা হয়েছিল। কারণ সরকারি প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করেছিলেন যে ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি কাঠামোগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ভিলমা লাগনায়ো তাদের ধসে পড়া মানয়ের বাড়ি থেকে তার পরিবারের সদস্যদের পোশাক ও জিনিসপত্র বাঁচাতে ছুটে যান।
লাগানায়ো বলেন, ‘অর্থের সঙ্কটের কারণে (আমাদের বাড়ি) পুনঃনির্মাণ করা করা এখন কঠিন।’
ফিলিপাইনের ভূকম্পবিদ্যা অফিস মিন্দানাওতে প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে ৮০০টিরও বেশি আফটারশক রেকর্ড করেছে, যা বড় ধরনের ত্রুটিপূর্ণ এলাকা হিসেবে মিন্দানাওকে চিহ্নিত করেছে।
ভূকম্পবিদ্যা অফিস জানায়, এগুলো (আফটারশক) কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপকূল বরাবর দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় দুই ঘণ্টার ড্রাইভ দূরত্বে অবস্থিত মাতিতে, মার্গারিটা মুলে ও তার আত্মীয়রা তার বড় বোনের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেছিলেন।
তিনি ভূমিকম্পের আগেই রোগে মারা গিয়েছিলেন।
যদিও সুনামির সতর্কতা প্রত্যাহারের পরেও প্রতিবেশীরা দূরে ছিলেন।
অশ্রুসিক্ত মুলে বলেন, ‘যদি কিছু ঘটে, তবে তারা (আত্মীয়রা) ‘তোরা-তোরা’ ব্যবহার করে লাশ বহন করবে।’
‘তোরা তোরা’ এক ধরনের হাতে টানা ট্র্যাক্টর-গাড়ি, যা দক্ষিণের গ্রামীণ এলাকায় পরিবহনের প্রধান মাধ্যম।
ফিলিপাইনে ভূমিকম্প প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা, দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অব ফায়ার’-এ অবস্থিত।
১৯৭৬ সালে মিন্দানাও দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পের ফলে সুনামি হয়। ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে ৮ হাজার মানুষ মারা যায় বা নিখোঁজ হয়, যা ছিল ফিলিপাইনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
সূত্র : বাসস