জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সংসদ ভেঙে দিলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

আনুতিনের প্রধানমন্ত্রিত্বকে সমর্থন দেয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিপল’স পার্টি তার পাশ থেকে সরে যাবার পরই সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত এলো।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
২০২৩ সালের আগস্টের পর থেকে আনুতিন থাইল্যান্ডের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী
২০২৩ সালের আগস্টের পর থেকে আনুতিন থাইল্যান্ডের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী |সংগৃহীত

কম্বোডিয়ার সাথে সীমান্তে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা নতুন সংঘর্ষের পর সংসদ ভেঙে দিয়েছে থাইল্যান্ড। আগামী ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক রাজকীয় ডিক্রিতে প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল জানিয়েছেন, তিন মাস আগে তার সংখ্যালঘু সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে।

তিনি বলেছেন, ‘উপযুক্ত সমাধান হলো সংসদ ভেঙে দেয়া। যা হবে জনগণের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার একটি উপায়।’

ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক হওয়া আনুতিন ২০২৩ সালের আগস্টের পর থেকে থাইল্যান্ডের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখনই জানুয়ারির শেষ নাগাদ সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অনাস্থা ভোটের মুখে তিনি নির্বাচনের সময় আরো এগিয়ে আনলেন তিনি।

গত মাসে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় ব্যর্থতার কারণে আনুতিন ও তার ভূমজাইথাই পার্টি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। ওই বন্যায় অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়।

এদিকে কম্বোডিয়ার সাথে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের মধ্যেই সংসদ ভেঙে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত এলো। এবারের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের অনুমোদিত ডিক্রিতে আনুতিন লিখেছেন, ‘এই সরকার দেশের সামনে আসা জরুরি সমস্যা দ্রুত সমাধানে জনপ্রশাসনের সব ধরনের উপায় প্রয়োগ করেছে। কিন্তু দেশ চালাতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে জটিল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে এটি ধারাবাহিক, কার্যকর ও স্থিতিশীল জনপ্রশাসন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়নি।’

আনুতিনের প্রধানমন্ত্রিত্বকে সমর্থন দেয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সবচেয়ে বড় যুবসমর্থিত, প্রগতিশীল দল পিপল’স পার্টি তার পাশ থেকে সরে যাবার পরই সংসদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত এলো। মতাদর্শিক দিক দিয়ে পিপল’স পার্টি আর বাস্তববাদী, রক্ষণশীল ভূমজাইথাই পার্টির অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে।

বিরোধী জোটের এই সমর্থন ছিল শর্তসাপেক্ষ। অন্যান্য দাবির পাশাপাশি তারা চাইছিল আনুতিন যেন সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধানের সংস্কার শুরু করেন এবং চার মাসের মধ্যে সংসদ ভেঙে দেন।

পিপল’স পার্টির এখন অভিযোগ, ভূমজাইথাই সেই চুক্তি রক্ষা করেনি। থাই গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা শুক্রবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ‘জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ দেখাতে’ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ ভেঙে দিতে আহ্বানও জানিয়েছিল দলটি।

গত এক বছর ধরে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান। এই সময়ে দুইজন প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুতও করেছে আদালত। নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে আনুতিনের পূর্বসূরি পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে অপসারণ করা হয়। সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ফাঁস হওয়া এক ফোন কলে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে তিনি ‘চাচা’ বলে সম্বোধন ও থাই সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেছিলেন।

তার আগের নেতা স্রেত্তা থাভিসিনকেও নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে বরখাস্ত করা হয়। থাভিসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার মন্ত্রিসভায় এমন একজন সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন যিনি একসময় জেলে ছিলেন।

সূত্র : বিবিসি