জাতিসঙ্ঘ কেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবি করল?

ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে আবারো নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র ব্যবহার করছে। অথচ এ ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো মূল্যবোধের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক |পার্সটুডে

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপর আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কেবল দখলকৃত ভূখণ্ডে নাগরিক সমাজের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং বৈশ্বিকপর্যায়েও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

কয়েক দিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিনটি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তিনটি এনজিও- ‘আল-হক’, ‘আল-মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ এবং ‘ফিলিস্তিন হিউম্যান রাইটস সেন্টার’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে ইসরাইলকে ‘অবৈধভাবে লক্ষ্যবস্তু’ করার কাজে জড়িত।

যখন গাজার পরিস্থিতি এখনো চরম সঙ্কটাপন্ন এবং দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যার কারণে ফিলিস্তিনিদের জীবন আরো কঠিন হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো। অথচ এ সময় ফিলিস্তিনপন্থী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উপস্থিতি ও কার্যক্রম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। ইসরাইলি নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ও নথিপত্র আন্তর্জাতিক মহলে আরো সচেতনতা ও সমর্থন তৈরি করেছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার একটি বড় কারণ হলো ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সমর্থন করেছে। এই আদালত একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্ব হলো যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মামলাগুলো তদন্ত ও বিচার করা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘আল-হক’, ‘আল-মিজান’ ও ‘ফিলিস্তিন হিউম্যান রাইটস সেন্টার’ আদালতের পদক্ষেপকে সমর্থন করে আসছে। তারা মনে করে এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গাজা ও পশ্চিমতীরে ইসরাইলি অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ। এই সংগঠনগুলো বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে গাজা যুদ্ধ, বিমান হামলায় বেসামরিক জনগণের হত্যাকাণ্ড, বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা এবং পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দখলদার ইসরাইলের মিত্র দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে।

আল-মিজান সেন্টারের উপ-পরিচালক সামির যাকুত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যার প্রধান অংশীদার। তারা ইসরাইলি অপরাধের জন্য রাজনৈতিক, আর্থিক ও আইনি সহায়তা দেয়। তিনি বলেন, যে সংগঠনগুলো ইসরাইলি অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ আসলে তাদের ওই নীতিরই ধারাবাহিকতা, যা আগেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর ও জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছিল।

ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে আবারো নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র ব্যবহার করছে। অথচ এ ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো মূল্যবোধের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা। যেসব মূল্যবোধ রক্ষার দাবি যুক্তরাষ্ট্র সবসময় করে এসেছে এবং অন্য দেশগুলোকে তা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

সূত্র : পার্সটুডে