যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী ভিসায় যেতে ১ লাখ ডলার ফি বাড়ালেন ট্রাম্প

এখন পর্যন্ত এই ভিসার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি বাবদ মোট ১৫০০ ডলার খরচ করতে হতো।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প |সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশী কর্মী হিসেবে যেতে চাইলে এখন থেকে আরো এক লাখ ডলার অর্থ গুনতে হবে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এমন একটি একটি নির্বাহী আদেশের স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এইচ-ওয়ান বি ভিসা প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র যেতে আবেদনকারীদের জন্য এখন থেকে এক লাখ ডলার বা ৭৪ হাজার পাউন্ড বাড়তি খরচ যুক্ত করা হয়েছে। এই কর্মসূচির ‘অপব্যবহার’ কিংবা নির্ধারিত অর্থ না দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে বলেও ওই আদেশে বলা হয়েছে।

এইচ-ওয়ান বি ভিসা কর্মসূচির সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, এই ভিসা মার্কিন কর্মীদের জন্য কাজের সুযোগ নষ্ট করছে। অন্যদিকে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কসহ যারা এই কর্মসূচির পক্ষে রয়েছেন তাদের যুক্তি, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বজুড়ে শীর্ষ প্রতিভাবানদের আকর্ষণ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

এদিকে অন্য আরেকটি আদেশে, কিছু নির্দিষ্ট খাতের অভিবাসীদের জন্য এক মিলিয়ন পাউন্ড থেকে শুরু করে ফি প্রদানের বিনিময়ে দ্রুত ভিসা দেয়ার একটি নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ পদ্ধতি চালু করেছেন ট্রাম্প।

শুক্রবার এসব ঘোষণার সময় ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সাথে যোগ দেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। তিনি বলেন, ‘এইচ-ওয়ান বি ভিসার জন্য বছরে এক লাখ ডলার দিতে হবে এবং সব বড় কোম্পানি এতে রাজি আছে। আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি।’

লুটনিক বলেন, ‘যদি আপনি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে যান, তাহলে আমাদের দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাতক হওয়া একজনকে প্রশিক্ষণ দিন। মার্কিন নাগরকিদের প্রশিক্ষণ দিন। আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়ার জন্য লোক আনা বন্ধ করুন।’

২০০৪ সাল থেকে এইচ-ওয়ান বি ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদনের সংখ্যা প্রতি বছর ৮৫ হাজারে সীমাবদ্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত এই ভিসার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি বাবদ মোট ১৫০০ ডলার খরচ করতে হতো।

মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থা ইউএসসিআইএস-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের জন্য এইচ-ওয়ান বি ভিসার আবেদন অনেকটাই কমে প্রায় তিন লাখ ৫৯ হাজারে নেমে এসেছে। যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গত অর্থবছরে এই কর্মসূচির সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিল অ্যামাজন। এরপরেই রয়েছে টেক জায়ান্ট টাটা, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল ও গুগল।

ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতামত জানতে এই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

ওয়াটসন ইমিগ্রেশন ল-এর প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী তাহমিনা ওয়াটসন বলেন, এই রায় তার অনেক ক্লায়েন্টের জন্য ‘কফিনে পেরেক ঠুকে’ দেয়ার মতো হবে, যারা বেশিভাগই স্টার্ট-আপ ও ছোট ব্যবসা করছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা সবারই ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এই এক লাখ ডলারের প্রভাব ভয়াবহ হবে। অনেক ছোট বা মাঝারি আকারের কোম্পানি আপনাকে বলবে যে তারা আসলে কাজ করার জন্য কর্মী খুঁজে পাচ্ছে না।’

লিটলার মেন্ডেলসন পিসির অভিবাসন ও বৈশ্বিক গতিশীলতা অনুশীলন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান জর্জ লোপেজ বলেন, এক লাখ ডলার ফি ‘প্রযুক্তি খাত ও সব শিল্পে মার্কিন প্রতিযোগিতার ওপর একটা স্থবিরতা আনবে।’

গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি এইচ-ওয়ান বি ভিসা সংক্রান্ত ‘যুক্তির উভয়পক্ষই’ বোঝেন।

আগের বছর নির্বাচনি প্রচারণার সময়ও প্রযুক্তি শিল্প সংশ্লিষ্টদের সমর্থন পেতে প্রতিভা আকর্ষণের প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি, এমনকি কলেজ স্নাতকদের জন্য গ্রিন কার্ডের প্রস্তাবও করেছিলেন ট্রাম্প।

এইচ-ওয়ান বি ক্যাটাগরিতে ভিসা আবেদনের যাচাই-বাছাই আরো শক্তিশালী করা ও জালিয়াতি বন্ধ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে নিজের প্রথম মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশে পৌঁছায়। যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পাঁচ শতাংশ থেকে আট শতাংশ এবং তারপর জো বাইডেনের আমলে দুই শতাংশ থেকে চার শতাংশ ছিল। সে সময় ট্রাম্প প্রশাসনের এইচ-ওয়ান বি আদেশের কঠোর সমালোচনা করে পিছু হটেছিল প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো।

সূত্র : বিবিসি