ফাঁস হওয়া গোপন রিপোর্টে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, তদন্ত শুরু এফবিআইয়ের

‘আমরা এখন হুইসলব্লোয়ারদের বা গোপন তথ্য ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। এফবিআই ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভাবছে, কিভাবে তথ্যপ্রবাহ আরো কঠোর ও সুরক্ষিত করা যায়।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প |সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ছিল, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর সাম্প্রতিক বিমান হামলায় সেগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ-এর একটি গোপন ‘প্রাথমিক যুদ্ধ-ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন’ রিপোর্ট সেই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। রিপোর্টটি সম্প্রতি ফাঁস হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। হামশাহরি অনলাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই মূল্যায়ন রিপোর্টটি ‘ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্টের দাবিকে খাটো করা।

এই ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই তদন্ত শুরু করেছে এবং ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কংগ্রেসের সাথে গোপন তথ্য ভাগ করে নেয়ার মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অ্যাক্সিওসকে দেয়া বক্তব্যে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্র জানায়, শনিবার ইরানে চালানো বোমা হামলার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছিল এই যুদ্ধ-ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন রিপোর্টটি, যা কেবলমাত্র স্যাটেলাইট চিত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এতে সরাসরি মাঠ পর্যায়ের কোনো প্রমাণ বা তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

একজন শীর্ষ হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এখন হুইসলব্লোয়ারদের বা গোপন তথ্য ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। এফবিআই ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভাবছে, কিভাবে তথ্যপ্রবাহ আরো কঠোর ও সুরক্ষিত করা যায়, যাতে তথাকথিত ‘ছায়া-রাষ্ট্রের’ কর্মীরা মিডিয়ায় কম-নিশ্চয়তাসম্পন্ন বিশ্লেষণ ফাঁস করতে না পারে।’

এই ঘটনার পর সরকারের শ্রেণিবদ্ধ তথ্য শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ক্যাপনেটের মাধ্যমে কংগ্রেসের কাছে তথ্য পাঠানো সীমিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কারণ, সোমবার রাতে ডিআইএ-এর রিপোর্টটি ক্যাপনেটে আপলোড করা হয়, আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস সেই রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ করে।

রিপোর্টে বলা হয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য বিঘ্নিত হয়েছে বটে, তবে তা একেবারে ধ্বংস হয়নি, যেমনটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন।

ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার একটি এবং এটি সরাসরি পেন্টাগন বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। সংস্থাটির মূল কাজ হলো বৈশ্বিক হুমকি ও শত্রুদের সামরিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ করা এবং সামরিক অভিযানের ফলাফল মূল্যায়ন করা।

এই রিপোর্ট ফাঁসের ঘটনায় কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের ক্ষোভ আরো বেড়েছে। আগে থেকেই তারা অভিযোগ করছিলেন, ইরান আক্রমণের আগে কংগ্রেসকে কিছু জানানো হয়নি। এখন আবার তথ্য প্রবাহ আরো সীমিত করার ঘোষণায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা তাতে বিরক্ত নন।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টা অদ্ভুত। রিপোর্ট আপলোড হওয়ার সাথে সাথেই তা মিডিয়ায় চলে যায়। এভাবে বারবার ফাঁস হওয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

অ্যাক্সিওসের সূত্র অনুযায়ী, ফাঁস হওয়া রিপোর্ট সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কিছু বিষয় স্পষ্ট- এটি হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়েছিল, কেবল স্যাটেলাইট ইমেজের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল এবং এটি গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের মাত্র একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন, যার নিজস্ব ভাষায় ‘নিশ্চয়তার মাত্রা কম’ বলে উল্লেখ ছিল।

এই প্রতিবাদ কেবলমাত্র সামরিক কৌশল নির্ধারণের একটি সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রচারণার সময় থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। রাশিয়ার সাথে কথিত সংযোগ নিয়ে চলা তদন্তের পর থেকে এই অবিশ্বাস আরো বেড়েছে। সাম্প্রতিক এই ফাঁস সেই উত্তেজনাকে আরো উসকে দিয়েছে।

একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাম্প ভালো করেই জানেন, গোয়েন্দা মহলে এখনো অনেকেই তাকে ঘৃণা করে।’

ইউরোপে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের এক প্রেস কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং সিনেটর মার্কো রুবিও গোপন রিপোর্টের কভারেজের জন্য সংবাদমাধ্যমের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন, ইরানের পরমাণু সক্ষমতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘গুরুতর আঘাত’ হেনেছে, যা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মূল্যায়নেও প্রতিফলিত হয়েছে।

সিনেটর মার্কো রুবিও বলেন, ‘মিডিয়া যেভাবে রিপোর্টের অংশবিশেষ প্রকাশ করছে, তা আসলে হুইসলব্লোয়ারদের তৈরি গল্প। এটাই তাদের চিরাচরিত খেলা- তারা রিপোর্টের কিছু অংশ নিয়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে, যাতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।’