ট্রাম্প মধ্য এশিয়ায় কী চান?

মধ্য এশিয়া-মার্কিন বৈঠক ৬ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প |পার্সটুডে

ওয়াশিংটনে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের নেতাদের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত অবস্থান নিয়ে বিশ্ব শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে লক্ষ্যে রাশিয়া ও চীনের আশেপাশে তার প্রভাব জোরদার করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে।

মধ্য এশিয়া-মার্কিন বৈঠক ৬ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের প্রস্তুতি, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সফরসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের পরিধি বৃদ্ধিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুরুত্বারোপের বিষয়টি ফুটে ওঠে। মার্কিন প্রতিনিধিদের এই সফরের উদ্দেশ্য হলো এই অঞ্চলের সাথে মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্য এশিয়ায় তার অংশীদারদের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং সম্পর্ক জোরদার করার জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। আমরা ‘5+1’ প্ল্যাটফর্মের কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আমাদের অংশীদারিত্বের ১০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য উন্মুখ।’

ট্রাম্প প্রশাসন মধ্য এশিয়ায় মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব জোরদার করতে এবং চীন ও রাশিয়াকে আটকাতে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে।

কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান এই পাঁচটি দেশ নিয়ে মধ্য এশিয়া তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার একটি সংবেদনশীল বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলটি চীন, রাশিয়া এবং আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এবং শক্তি, বিরল মাটির উপাদান ও ট্রানজিট রুটের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব জোরদার করার চেষ্টা করেছে।

মধ্য এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য সমূহ

প্রথম লক্ষ্য : চীন-রাশিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা

মধ্য এশিয়ায় ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো চীন ও রাশিয়ার উপর এই অঞ্চলের দেশগুলোর নির্ভরতা হ্রাস করা। চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প এগিয়ে নিতে এবং ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক প্রভাব প্রসারিত করেছে এবং রাশিয়া ‘যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা’ ও ‘ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়ন’ এর মতো সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রভাব বজায় রাখছে। ট্রাম্প ওয়াশিংটনে 5+1 শীর্ষ সম্মেলনের মতো সভা করে এই দেশগুলোকে একটি বিকল্প পন্থা দেখানোর চেষ্টা করছেন। ভূ-রাজনৈতিকভাবে, রাশিয়া ও চীনের আঙ্গিনায় মার্কিন অবস্থান শক্তিশালী করা ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশগুলো ‘মিডল করিডোর’-এর সাথে জড়িত। তাই মধ্য এশিয়ায় তার উপস্থিতি বৃদ্ধি করে চীনা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে।

দ্বিতীয় লক্ষ্য : গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ

ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে বিরল খনিজ মাটির উপাদানগুলোর উপর বিশেষ নজর দিয়েছে। এসব উপাদান ব্যাটারি, সামরিক সরঞ্জাম এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ। চীন বর্তমানে এই উপাদানগুলির সরবরাহ ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। মধ্য এশিয়ার নেতাদের ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্প এই অঞ্চল থেকে সরাসরি এই সম্পদগুলো সুরক্ষিত করতে এবং চীনের উপর আমেরিকার নির্ভরতা কমাতে চাইছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসান্ত বলেছেন যে চীন অনেক ক্ষেত্রেই ‘অবিশ্বস্ত অংশীদার’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজ উপাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ প্রাপ্তিত চীনের নির্ভরতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্প মধ্য এশিয়ায় একটি বিশাল সম্পদের অস্তিত্ব দেখতে পান যা চীনকে সরিয়ে দিতে এবং মার্কিন আইটি জায়ান্টদের কাছে ওই বিরল ধাতু সরবরাহ করা জরুরি।

তৃতীয় লক্ষ্য : নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করা

এই অঞ্চলে, বিশেষ করে আফগানিস্তানের সীমান্তে, ট্রাম্প মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে চাইছেন। এই সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া, তথ্য বিনিময় করা; এমনকি অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা। এই পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য হলো চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব মোকাবেলা করা। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা। আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ট্রাম্প যে চেষ্টা করছেন সে কারণে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

চতুর্থ লক্ষ্য : বিনিয়োগ

ট্রাম্প বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃত্তি প্রদান, শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করা এবং আঞ্চলিক বাজারে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর প্রবেশকে সহজতর করা। এই নীতিগুলো কিছু অংশ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এই সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সতর্ক। তারা বৈশ্বিক শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতার শিকার হতে চায় না। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করতে পছন্দ করে। এছাড়া কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে মার্কিন হস্তক্ষেপ এই অঞ্চলে আরো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি তাদের ওপর পশ্চিম অথবা রাশিয়ার মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার চাপ থাকে।

সূত্র : পার্সটুডে