এপস্টেইন তদন্তের নথিপত্র প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের

২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এটি ঘিরে ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সাথে তার সম্পর্ক আবারো শিরোনামে আসে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
এসস্টেইনের ফাইল প্রকাশে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ
এসস্টেইনের ফাইল প্রকাশে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ |সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে যৌন অপরাধে দণ্ডিত কুখ্যাত নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের সব ফাইল প্রকাশের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ। ৪২৭-১ ভোটে এটি অনুমোদন করেছে প্রতিনিধি পরিষদ। সিনেটও সর্বসম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই দ্রুত পাস করেছে।

এটি এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেবিলে যাবে। তার স্বাক্ষরের ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ এসব নথিপত্র প্রকাশ করবে। ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করে কংগ্রেসকে রেকর্ড প্রকাশের জন্য ভোট দেয়ার আহ্বান জানানোর মাত্র কয়েকদিন পরেই এই পদক্ষেপ নেয়া হলো। তার অনেক সমর্থকের জনসমক্ষে প্রতিবাদের মুখে তিনি নথিপত্র প্রকাশের জন্য ভোট দিতে বলেছিলেন।

২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এটি ঘিরে ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সাথে তার সম্পর্ক আবারো শিরোনামে আসে। যদিও কোনো অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।

এপস্টেইনের ফাইলটি প্রকাশের বিষয়ে একমাত্র আপত্তিকারী ছিলেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান ক্লে হিগিন্স। এসব তথ্য প্রকাশের ফলে ‘নিরপরাধ মানুষদের আহত করা হচ্ছে’ বলেও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।

ক্যাপিটল হিলের যারা ফাইলটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, তাদেরকে আক্রমণ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এমন বক্তব্য ওয়াশিংটনের অনেককে অবাক করেছে। এপস্টেইনের ফাইল প্রকাশে বারবার চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন হাউস স্পিকার মাইক জনসন।

মার্কিন সিনেটে এই পদক্ষেপটি শেষ হতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু হাউসে বিকেলের ভোটের পর ঘটনাক্রম দ্রুত গতিতে বদলাতে থাকে। সিনেটের নেতা চাক শুমার বিলটি উত্থাপন করেন। এ নিয়ে যেহেতু কেউ আপত্তি করেনি, তাই কোনো বিতর্কও হয়নি এবং বিলটিতে কোনো সংশোধনী যুক্ত করা হয়নি।

বিলটি সিনেট থেকে প্রেসিডেন্টের ডেস্কে যাবে। স্বাক্ষরের মাধ্যমে তিনি একে আইনে পরিণত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রকাশের জন্য অবশ্য কংগ্রেসের ভোটের প্রয়োজন ছিল না। ট্রাম্প নিজেও এই আদেশ দিতে পারতেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আইনটি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এপস্টেইন ও তার সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সাথে সম্পর্কিত ‘সব রেকর্ড, নথি, যোগাযোগ ও তদন্তমূলক উপকরণ’ প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এপস্টাইনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অ্যানি ফার্মার বলেছেন, ফাইলগুলো গোপন রাখা ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা’র শামিল। তিনি আরো বলেছেন, ‘যেহেতু এই অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি, তাই আরো অনেক মেয়ে ও নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

এপস্টেইন ফাইল কী?

‘এপস্টাইন ফাইলস’ শব্দটি কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসনকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারণ দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী ও অর্থদাতা জেফরি এপস্টেইনের অপরাধের কারণে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে আরো স্বচ্ছতার জন্য ট্রাম্পের সমর্থক ও তার নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকে চাপ তৈরি হচ্ছিল।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব নথিপত্র প্রকাশের বিরোধিতা করার পর ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং রিপাবলিকানদের এপস্টেইনের ফাইলগুলো জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করার জন্য ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।

এপস্টেইনের সাথে ট্রাম্পের নাম মূলত সামনে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প ও এপস্টেইন সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ২০০৮ সালে এপস্টেইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। তিনি এপস্টেইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

গত সপ্তাহে, হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে এপস্টেইন ও ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে চিঠিপত্র। ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

সূত্র : বিবিসি