ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের, যে প্রভাব পড়বে ভারতে

ভারতের ফার্মা কোম্পানিদের কাছে আয়ের একটা বড় উৎস হলো উত্তর আমেরিকা। ভারতীয় সংস্থাগুলোর আয়ের বেশিভাগ অংশ আসে এখান থেকে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প |সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধসহ একাধিক পণ্য আমদানির ওপর নতুন বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি ব্র্যান্ডেড ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হচ্ছে। যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

এই তালিকায় ভারী ট্রাক, রান্নাঘর ও বাথরুমের ক্যাবিনেটও রয়েছে। ভারী ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ এবং রান্নাঘর ও বাথরুমের ক্যাবিনেটের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মার্কিন বাজারে ওষুধের প্রধান রফতানিকারকদের তালিকায় রয়েছে ভারত। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই আবহে মার্কিন বাজারে ভিন্ন দেশ থেকে রফতানি হওয়া ওষুধের ওপর চড়া শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ভারতে কতটা প্রভাব পড়বে সে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ট্রাম্প কী বলেছেন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে নতুন বাণিজ্য শুল্ক সম্পর্কে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটা ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট ফার্মা পণ্যের ওপর ১ অক্টোবর থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছি। যদি না সেই কোম্পানি এখানে ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট (ওষুধ প্রস্তুত করার জন্য কারখানা) স্থাপন করেন।’

এসব ওষুধ মার্কিন দেশেই তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, যদি ওই ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয় বা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্ল্যান্ট তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে থাকে তাহলে কোনো শুল্ক চাপানো হবে না।

ভারতীয় কোম্পানির ওপর প্রভাব

ট্রেড রিসার্চ অ্যাজেন্সি ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’ (জিটিআরআই)-এর মতে, ভারতের বৃহত্তম শিল্প রফতানি হয় ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর থেকে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২৭০ কোটি ডলার মূল্যের ওষুধ রফতানি হয়।

তবে এই ওষুধগুলোর বেশিভাগই জেনেরিক ওষুধ। জেনেরিক ড্রাগসের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের বদলে ওষুধের মূল নাম উল্লেখ করা থাকে, যা নিশ্চিত করে সেটা কোন কোন উপাদান ব্যবহার করে তা তৈরি করা হয়েছে।

তবে শুধু জেনেরিক ওষুধ নয়, ব্র্যান্ডেড ওষুধও ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হয়, যদিও জেনেরিক ওষুধের তুলনায় এই জাতীয় ওষুধের ব্যবসার পরিমাণ অনেকটাই কম। ডক্টর রেড্ডিস, লুপিন ও সান ফার্মা’র মতো ভারতীয় সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে ব্র্যান্ডেড ওষুধ রফতানি করে।

ট্রাম্প যখন ভারতীয় পণ্যের আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন জিটিআরআই-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এর ফলে জেনেরিক ও ব্র্যান্ডেড ওষুধ-উভয়ের দাম বেড়ে যাবে। জিটিআরআইয়ের মতে, যেসব ভারতীয় সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে বড় মাত্রায় ওষুধ বিক্রি করে তারা কম মার্জিনে কাজ করে।

ভারতের ফার্মা কোম্পানিদের কাছে একটা বড় আয়ের উৎস হলো উত্তর আমেরিকা। ভারতীয় সংস্থাগুলোর আয়ের বেশিভাগ অংশ আসে এখান থেকে। এই খাতে মুনাফার এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে এই অঞ্চল।

ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া জেনেরিক ওষুধ

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া জেনেরিক ওষুধের প্রায় অর্ধেকই আসে ভারত থেকে। আসলে ব্র্যান্ডেড ওষুধের সস্তা সংস্করণ হলো জেনেরিক ওষুধ।

প্রসঙ্গত, প্রেসক্রিপশন ঘাঁটলে দেখা যাবে ১০টার মধ্যে নয়টা প্রেসক্রিপশনে এই জাতীয় ওষুধই উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াই ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কের কারণে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক কয়েকটা ভারতীয় কোম্পানি এর ফলে বাজার ছাড়তে বাধ্য হতে পারে। তাদের মতে এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান ওষুধের ঘাটতিকে তা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

নিশানায় কি আসলে আয়ারল্যান্ড?

ব্র্যান্ডেড ওষুধের ওপর এই পরিমাণ বাণিজ্য শুল্ক আরোপের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এর লক্ষ্য কি আসলে আয়ারল্যান্ড?

প্রকৃতপক্ষে, ব্র্যান্ডেড ওষুধের বৃহত্তম প্রস্তুতকারকদের মধ্যে আয়ারল্যান্ড রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর এক ডজনেরও বেশি প্ল্যান্ট রয়েছে আয়ারল্যান্ডে। এর মধ্যে এমন কারখানাও রয়েছে যা কয়েক দশক পুরনো।

এই তালিকায় থাকা বহু কোম্পানি মার্কিন বাজারের জন্য ওষুধ তৈরি করে। যেমন- মার্ক ফার্মা। এই সংস্থা আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের কাছে অবস্থিত এক প্ল্যান্টে ক্যান্সারের জন্য বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত প্রেসক্রিপশন ড্রাগ কিট্রুডা তৈরি করে।

অ্যাবভি নামের সংস্থা ওয়েস্টপোর্টে বোটক্স ইনজেকশন তৈরি করে। এলি লিলির কিন্সলিতে অবস্থিত প্ল্যান্টে প্রস্তুত করা হয় স্থূলতা কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ। এই ওষুধের চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে তারা জনসন অ্যান্ড জনসন ও ফাইজারের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলোকে কম কর্পোরেট করের টোপ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে।

রয়টার্স-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকও আয়ারল্যান্ডের এই নীতিকে ‘কেলেঙ্কারি’র তকমা দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন একে রুখতে বদ্ধপরিকর।

সূত্র : বিবিসি